হিন্দু নারীকে উত্তরাধিকার বঞ্চিতের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের রুল
হিন্দু নারী বা কন্যাকে উত্তরাধিকার হিসেবে বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার ‘দায়ভাগা’ মতবাদের প্রধাগত বিধান ও পদ্ধতির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট।
‘দয়াভাগা স্কুল অব হিন্দু রিলিজিয়ন’ নামের প্রথাগত বিধান ও পদ্ধতি চ্যালেঞ্জ করা রিটে এ প্রশ্ন উঠেছে। সোমবার রিট আবেদনটির প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন।
উত্তরাধিকার হিসেবে বাবার রেখে স্থাবর-অস্থাবর বা অন্য সম্পত্তি থেকে হিন্দু নারী বা মেয়েকে বঞ্চিত করার ক্ষেত্রে ‘দয়াভাগা স্কুল অব হিন্দু রিলিজিয়ন’ নামের প্রথাগত বিধান বা পদ্ধতি সংবিধানের ২৭, ২৮(১) (২), ৩১ ও ৪২ আনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় কেন অসাংবিধানিক এবং একই সঙ্গে কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
সেই সঙ্গে সংবিধানের ১৯(২) অনুচ্ছেদের আলোকে পৈত্রিক সম্পত্তির (স্থাবর-অস্থাবর বা অন্য সম্পত্তি) উত্তরাধিকার হিসেবে হিন্দু নারী-পুরষের এই অসাম্য বা বৈষম্য দূর করে সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
আইন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট, ঢাকার তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতসহ অন্যান্য বিবাদীদের এক সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খায়রুল আলম চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
পরে রিটকারী পক্ষের আইনজীবী সকল সাংবাদিকদের বলেন, আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর আদালত রুল জারি করলেও এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত নিবেন। সেই জন্য আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন কিছু অ্যামিচি কিউরি (আদালতের সহায়তাকারী) নিয়োগ করবেন।
উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় রাজধানী ঢাকার ইন্দিরা রোডের প্রয়াত বাসিন্দা অশোক দাস গুপ্তের মেয়ে অনন্যা দাস গুপ্ত গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, অশোক দাস গুপ্ত দেশের প্রখ্যাত একজন ব্যবসায়ী এবং ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। অশোক দাস গুপ্ত ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর মারা যান। মৃত্যুর সময় অশোক দাস তার স্ত্রী রাখি দাস গুপ্ত, এক ছেলে অনির্বাণ দাস গুপ্ত এবং এক মেয়ে অনন্যা দাস গুপ্তকে রেখে গেছেন।
অশোক দাস গুপ্ত ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড এবং নাভানা সিএনজি লিমিটেডের বিপুল পরিমাণ শেয়ারের মালিক ছিলেন। এক পর্যায়ে অশোক তার নিজের হাতে থাকা ২ শতাংশ ছাড়া ওয়ান ব্যাংকের সমস্ত শেয়ার মেয়ে অনন্যার কাছে হস্তান্তর করেন। আবেদনে বলা হয়েছে, এক পর্যায়ে অশোক দাস গুপ্ত ওই ২ শতাংশ শেয়ারও জন্যও মেয়েকে মনোনিত করে যান।
যাই হোক, অমোক দাস গুপ্তের মৃত্যুর পর তার ছেলে নিম্ন আদালতে উত্তরাধিকার সংশাপত্রের জন্য মামলা করেন। এই মামলায় দাবি করা হয়, দায়ভাগা মতবাদের প্রথাগত আইন অনুযায়ী মেয়েরা মৃত বাবার সম্পত্তিতে কোনো অধিকার রাখেন না। এ মামলাটি বিচারাধীন। এ অবস্থায় হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন অনন্যা দাস গুপ্ত।