স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে হইচই সংসদে
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বক্তব্যের প্রতিবাদে সংসদে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, নিয়োগ না হওয়া এসব বিষয়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তা অস্বীকার করলে এই অবস্থার তৈরি হয়। জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী সাংসদদের নিজ এলাকার হাসপাতালের দায়িত্ব নিতে বলেন। ঢালাও অভিযোগ অগ্রণযোগ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় বিরোধী দলের সাংসদেরা হইচই করে প্রতিবাদ জানান।
জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সময় বলেন, ‘কতবার ডিও লেটার দেব? আমার এলাকার হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স নেই, ডাক্তার কবে পাব? এক্স-রে মেশিন কবে পাব? রেডিওলজিস্ট কবে পাব?
স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে যতবার বলি উনি ডিও লেটার দিতে বলেন। কতবার দেব?’ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দাবি সম্পর্কে পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘চলমান বরাদ্দের টাকাই খরচ করতে পারেননি। আবার বরাদ্দ চেয়েছেন।’
মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দাবি সম্পর্কে পীর ফজলু বলেন, ‘চলমান বরাদ্দের টাকাই খরচ করতে পারেনি। আবার বরাদ্দ চেয়েছেন।’
জাপার আরেক সাংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টাকা খরচ করতে পারেনি। ফেরত দিয়েছিলো। এটা আমরা চাই না। খরচ করতে না পারলে এখানে ৩৫০ জন এমপিকে ভাগ করে দেন। আমরা খরচ করি। স্বাস্থ্য সেবা আমরা দেখবো। আপনাদের দরকার নেই। ডাক্তার-নার্স নিয়োগ করতে পারছেন না। ৩৫০ এমপিকে দায়িত্ব দেন। আমরা নিয়োগের ব্যবস্থা করি।’
বিএনপির রুমিন ফারহানা স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন অনিময় তুলে ধরে বলেন, ‘এই যে বরাদ্দ দিচ্ছি সেটা কোথায় যাচ্ছে? বরাদ্দ খরচ করার সক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের আছে কি না সেই প্রশ্ন চলে আসছে।’
বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাত সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি দূর করতে হলে ডালপালা কেটে লাভ নেই। গাছের শেকড় উপড়ে ফেলতে হবে। স্বাস্থ্যের কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। দুর্নীতি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।’
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘এরশাদ সরকারের সফল মন্ত্রীর ছেলেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মনে করেছিলেন সফল হবেন। ভবিষ্যতে সফল হবেন বলে আশা করছি। তবে ৯ মাস হাসপাতালের যন্ত্রপাতি বিমান বন্দরে পড়ে থাকে কীভাবে?’
এ ছাড়া বিএনপির মোশাররফ হোসেন, জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী স্বাস্থ্য খাতের নানা অনিয়ম নিয়ে কথা বলেন। করোনাভাইরাসের টিকার অপ্রতুলতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলের সদস্যরা।
তাদেরে জবাব দিতে উঠে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক পর্যায়ে বিরোধী দলের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা হাসপাতালের চেয়ার। আপনাদের দায়িত্ব আছে। আপনাদের দায়িত্ব নিতে হবে।’
তিনি দুর্নীতির অভিযোগেরও জবাব দেন। বলেন, ‘মাস্ক নিয়ে কথা বলছেন। মাস্ক তো কেনাই হয়নি। তার পেমেন্ট দেয়া হয়নি। ঢালাও অভিযোগ দিলে তো বলবে না।’
এসময় বিরোধী দলের বেঞ্চ থেকে হইচই হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সদস্যরা। ‘আমরা পত্রিকা পড়ি না’ এমন শব্দও হাউস থেকে এ সময় শোনা যায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী একটু থেমে গেলে সামনে বসা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী তাকে বক্তব্য চালিয়ে যেতে ইশারা করেন।
মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে বলতে হবে। ঢালাওভাবে অনিয়মের কথা বললে গ্রহণযোগ্য হবে না। সুনির্দিষ্ট বলতে হবে, কোথায় দুর্নীতি হয়েছে?’
এ সময় বিরোধী দলের দিকে থেকে আবার হইচই হলে মন্ত্রী বলেন, ‘মাস্কের কোনো টাকাইতো দেওয়া হয়নি। সুনির্দিষ্ট করে বলতে হবে। ঢালাওভাবে বললে হবে না।’ এ পর্যায়ে আবারও হইচই হয়। এক পর্যায়ে মন্ত্রী বিরোধী দলের সদস্যদের ছাঁটাই প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে না বলে জানান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ২ ও ৩ জুলায়ের মধ্যে মর্ডানার ২৫ লাখ টিকা আসবে। একই সময়ে চীন থেকেও টিকা আসবে। কোভাক্সের মিলিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি টিকার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া জনসন অ্যান্ড জনসনের ৭ কোটি টিকা আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে পাওয়া যাবে। তখন দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া যাবে।
গত অর্থবছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাড়তি ৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে বলে জাহিদ মালেক জানান। তিনি বলেন, টাকা খরচ করতে না পারার অভিযোগ ঠিক নয়। বাড়তি খরচের হিসাব দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টিকা কেনায় তিন হাজার, করোনা পরীক্ষায় দুই হাজার এবং কোভিড রোগীর চিকিৎসায় দুই হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
দেশের স্বাস্থ্যসেবা ‘ভালো’ দাবি করে জাহিদ মালেক বলেন, ভারতে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে হয়নি। গত এক বছর সব কিছু বন্ধ। চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে পারছে না কেউ। তারা তো দেশের হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।