সরকারি চাকরিতে ২১ মাস বয়স ছাড়ের চিন্তা
সরকার মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের জন্য বড় আকারে বয়স ছাড়ের চিন্তা করছে। গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে চলতি বছরের পুরোটাই, অর্থাৎ ২১ মাস এই ছাড়ের আওতায় রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। সরকার প্রধানের সম্মতির পর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
এ সংক্রান্ত প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তৈরির কাজ চলছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হতে পারে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শিগগিরই তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে যদি প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাবটিতে সম্মতি দেন।
প্রধানমন্ত্রী সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হলে গত বছরের ২৫ মার্চের পর থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে যাঁদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ ছাড়িয়ে গেছে বা যাচ্ছে, তাঁরা এই ছাড়ের সুবিধা পাবেন। অন্যদিকে ২৫ মার্চের আগের জন্য যে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল সেটি বহাল থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষা অবশ্য এ বয়স ছাড়ের আওতায় অন্তর্ভুক্ত থাকছে না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, করোনাকালেও বিসিএসের নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। তাই বিসিএসকে এই সুযোগের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সরকার গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার খবর দেয়। এই সংক্রমণ মোকাবেলায় ২৫ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি ছিল। গত বছরের শেষের কয়েক মাস এবং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি অনেকটা সহনীয় ছিল।
এরপর গত এপ্রিল থেকে আবার মহামারী করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় নানা পর্যায়ে বিধি-নিষেধ জারি করা হয়। সর্বশেষ বিধি-নিষেধের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামীকাল ১০ আগস্ট।
এই মহামারী করোনার কারণে সাধারণ ছুটি ও বিধি-নিষেধ চলাকালে বিসিএস ছাড়া অন্য সব সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি নিয়মিত প্রকাশিত হয়নি। একদিকে করোনার কারণে তরুণরা সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে বয়স বাড়ানোর একটি আন্দোলন করোনাকালের আগে থেকেই চলছিল।
সরকার তাই সব মিলিয়ে করোনাকালকে বিবেচনায় নিয়ে আপাতত সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সের ক্ষেত্রে ২১ মাস ছাড় দেওয়ার কথা চিন্তা করছে। আমরা জানি বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর।
সরকারি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আগামী বছরও যদি করোনার কারণে এমন পরিস্থিতি চলমান থাকে সেই ক্ষেত্রে নতুন ভাবে এ বিষয়ে চিন্তা করবে সরকার।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে বয়স ছাড় দেওয়া হলেও এই সুবিধার আওতায় কত দিন পর্যন্ত চাকরির বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে তা স্পষ্ট জানা যায়নি।
এর সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে খসড়া প্রণয়নের কাজ চলছে। এই বিষয়টিও চূড়ান্ত হয়নি। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়ে আপাতত সময় বেঁধে দেওয়ার নিয়ম নাও থাকতে পারে। কারণ বর্তমানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। কোনো কারণে আগামী বছর তৃতীয় ঢেউ এলে নতুন করে চাকরির বয়স ছাড়ের প্রশ্ন আসতে পারে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে সামনের যেকোনো একটি মাস পর্যন্ত সীমারেখা বেঁধে দেওয়ার চিন্তা চলছে। এই সীমা কত মাস হবে, সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।’
করোনায় তরুণদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়স ছাড়ের সুযোগ দিয়ে গত সেপ্টেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা আদেশে বলা হয়েছিল, ওই বছরের ২৫ মার্চ তারিখের আগে যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতির পর ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছিল, শুধু সেসব ক্ষেত্রে বয়স ছাড়ের সুযোগ মিলবে।
আর ওই আদেশে এও বলা হয়েছিল, ‘যে সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং এর আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, সংস্থা ও অন্যান্য সংবিধিবদ্ধ, স্বায়ত্তশাসিত, জাতীয়কৃত প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির সরকারি চাকরিতে (বিসিএস ব্যতীত) সরাসরি নিয়োগের লক্ষ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ হতে ২৫-০৩-২০২০ তারিখের পূর্বে নিয়োগের ছাড়পত্র গ্রহণসহ সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা সত্ত্বেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি, সে সকল দপ্তরের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ২৫-০৩-২০২০ তারিখে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হলো।’
জনপ্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের আদলেই এই বছরও বয়স ছাড় দিয়ে আদেশ জারির প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু গত দেড় বছরে দফায় দফায় সাধারণ ছুটি, বিধি-নিষেধ বা লকডাউনের আওতায় ছিল দেশ। দীর্ঘ সময়ের এই বেড়াজালের কারণে আগের বারের মতো বয়স ছাড়ের নির্দেশনা দেওয়া খুবই জটিল বিষয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই জন্য করোনাকালীন পরিস্থিতি শুরুর দিন অর্থাৎ গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে চলতি বছরের পুরোটাই অর্থাৎ ২১ মাস পূর্ণাঙ্গ ছাড় দেওয়ার চিন্তা করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
নিজেট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র আমাদের বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ চলছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেন তা-ই বাস্তবায়ন হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন গতকাল বলেন, ‘চাকরির ক্ষেত্রে সরকার সব সময় তরুণদের সুবিধার কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগেও বয়স ছাড়ের সুযোগ দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে। এবার নতুন সিদ্ধান্ত আসলেও বয়স ছাড় দিয়ে জারি করা আগের (গত বছরের সেপ্টেম্বরের) আদেশটি বাতিল হবে না।’