ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাস ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাবে চার দিন আগে যে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করেছে সেই অভিযানের নাম তারা দিয়েছে ‘অপারেশন আল কুদস সোর্ড’।
মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও ইসরায়েল এরই মধ্যে গাজায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে বহু ফিলিস্তিনিকে হত্যা এবং অবকাঠামো ধ্বংস করেছে কিন্তু এ যুদ্ধ ইসরায়েলের জন্যও খুব খারাপ পরিণতি ডেকে আনবে।
ইরানের গণমাধ্যম পার্সটুডে জানায়, এই লড়াই শুরুর পর হামাসের প্রথম দফা হামলায় গাজা থেকে ইসরায়েলের দিকে বহু রকেট ছুঁড়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত হামাস ১৮০০শ’র বেশি রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ করেছে।
এরই মধ্যে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু আবিদি, ইসরাইলের রামুন বিমানবন্দরে মধ্যম পাল্লার আয়াশ-২৫০ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলার কথা জানিয়ে বলেছেন, এটির পাল্লা ২৫০ কিলোমিটার এবং এর ব্যাপক ধ্বংস ক্ষমতা রয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন, হামাস দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এদিকে হামাসের মুখপাত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত তারা পুরোনো ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েই হামলা চালিয়েছেন। এখনো নতুন ক্ষেপণাস্ত্র তারা বেরই করেননি।
এদিকে এমন মন্তব্যের পর পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এতে বোঝায় যাচ্ছে তাদের প্রচুর সংখ্যক রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত রয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে ইসরায়েল গাজার ওপর সর্বাত্মক অবরোধ দিয়ে রেখেছে, তবুও হামাস সামরিক খাতে যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে ইসরায়েলের জন্য তা বিরাট হুমকি।
এছাড়া ইসরায়েলের একটি বিমানঘাঁটি, দুটি আয়রন ড্রোম স্টেশন এবং একটি রাসায়নিক কারখানায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে হামাস।
তারা আরও বলেছে, নেজেভ মরুভূমির নাহাল ওজ কিবুৎজ রাসায়নিক কারখানায় আত্মঘাতী শিহাব ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে। তার মানে দাঁড়ায় ড্রোন প্রযুক্তিতেও সক্ষমতা অর্জন করেছে হামাস।
এদিকে ইসরায়েলের জন্য বিপদের কারণ হচ্ছে, হামাসের এই রকেট এবং আত্মঘাতী ড্রোন হামলায় এ পর্যন্ত তাদের আটজন নিহত হয়েছে, বহু সংখ্যক মানুষ আহত হয়েছে এবং বহু মানুষ মাটির নীচে আশ্রয় শিবিরে গা ঢাকা দিয়ে আছে।
এছাড়া ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বহু ক্ষতি সাধন করেছে হামাসের রকেট। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা আয়রন ডোম ফিলিস্তিনিদের সব রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে পারছে না।
এতে আয়রন ডোম ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একদিকে, ফিলিস্তিনিদের শতশত রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে তাদের অক্ষমতার পরিচয় পাওয়া গেছে অন্যদিকে আয়রন ডোমের পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয়ের কারণে সাধারণ ইসরায়েলিদেরকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে।
এ বিষয়ে ইসরায়েলি সাময়িকী ‘ইসরায়েল হাইয়ুম’ জানায়, প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ তৈরিতে ৮০ হাজার ডলার ব্যয় হয়েছে। এর আগে দেখা গেছে হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে যে রকেট হামলা চালাতো তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হত।
বিশেষ করে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামাসের রকেট হামলার বাইরেই থাকত। কিন্তু এবার দেখা দেখা গেছে, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা আরও বেশি শক্তিমত্ত্বা দেখিয়েছে এবং তাদের ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ বিমান বন্দরগুলোতে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো থেকেই বোঝা যায় হামাস কোনো অংশেই আগের মতো দুর্বল নয়।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই নেতানিয়াহু বর্তমান যুদ্ধ শুরু করেছেন। তাদের মতে নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত স্বার্থ হলেও ইসরায়েলের অপরিসীম ক্ষতি হতে পারে।