বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন আজ
আজ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ওরফে ফজিলাতুন্নেছা রেনুর জন্মদিন। তিনি ছিলেন এক মহীয়সী নারী। তিনি ছিলেন স্বামী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রেরণা ও আত্মবিশ্বাসের উৎস।
বঙ্গমাতাকে ছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে গোটা জীবনে এত সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হতো না। বঙ্গমাতাকে ছাড়া বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসম্পূর্ণ। এটা সত্য বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবের বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পেছনে বঙ্গমাতার ভূমিকা ছিলো অনস্বীকার্য।
শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, লড়াই-সংগ্রামে কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অপার ধৈর্য্য আর সাহসিকতায় আগলে রেখেছিলেন পরিবার এবং দলের নেতাকর্মীদের। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের নীরব সারথী ছিলেন। সকল সংকটে পাশে থেকে অফুরান সাহস যোগানোর উৎসও ছিলেন বঙ্গমাতা।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার ১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্ম। ডাক নাম ছিলো রেণু। বাবা শেখ জহুরুল হক ও মা হোসনে আরা বেগম। ৫ বছর বয়সেই বাবা-মাকে হারান ছোট্ট রেণু।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাথে অল্প বয়সেই বিয়ে হয় শেখ ফজিলাতুন্নেছার। তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী ছিলেন না, ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর, বাঙালির মুক্তি আন্দোলনে সহযোদ্ধার ভূমিকা ছিলো তার।
পরম মমতায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সন্তানদের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদেরও আগলে রাখতেন। নিজ গুণেই তিনি হয়ে উঠেন বঙ্গমাতা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য নাসরিন আহমেদ বলেন, উনি সবাইকেই দেখেছেন, সবকিছুই করেছেন এবং এখন তো আমরা জানি যে উনি কতো কিছু করেছেন। কিন্তু আমি কখনই তার মুখে বিরক্তি দেখেনি, উঁচু গলায় রাগারাগিও করতে দেখেনি। দূরদর্শি বঙ্গমাতা স্বাধীনতাবিরোধীদের নানান ষড়যন্ত্রে নিজের পরিবার আর বাংলার মানুষের ভবিষ্যত নিয়ে ছিলেন শংকিত।
ঢাবির সাবেক উপ-উপাচার্য নাসরিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু গণভবনে থাকতেন কিন্তু ওনার বাসায় উনি থাকতেন আর আমাদের দুই বাড়ির মধ্যখানে একটি গেট থাকতো, এই গেটটা খোলাই থাকতো। একজন সেন্ট্রি দাঁড়িয়ে থাকতো, মামি বললেন এই যে দেখ এদের দেখেছিস। আমি বললাম হ্যাঁ, এরা কেন যে দাঁড়িয়ে থাকে? তখন উনি বললেন যে, আজকে মুখ ওদের অন্যদিকে না। আমি বললাম যে হ্যাঁ, উনি বললেন খুব শীগগিরই ওদের মুখ এদিকে হয়ে যাবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, অপার সাহস আর ত্যাগের উদাহরণে ইতিহাসের পাতায় থাকবেন অক্ষয় নাম হয়ে।
দেশপ্রেম, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, সাহসিকতা, ত্যাগ ও অনুপ্রেরণার বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিবসকে এবারই প্রথম ‘ক’ শ্রেণীর জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। তাই সরকারী ও বেসরকারীভাবে কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবেন এ দেশের সুদীর্ঘ সংগ্রামের ফসল মহার্ঘ্য স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসে অনন্য ভূমিকা পালনকারী মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে।
বঙ্গমাতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ইতোমধ্যে রাজধানীর সব গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোহনায় তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে লাগানো হয়েছে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারসহ ইতিহাস সংবলিত ডিজিটাল ব্যানার। ঐতিহাসিক ধানম-ির ৩২ নম্বর জাতির পিতার বাসভবনের চারিদিকে, বনানী কবরস্থানের সামনেসহ রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লায় শোভা পাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে টানানো অসংখ্য পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন।
বঙ্গমাতার জন্মদিন পালনে সরকারী ও বেসরকারীভাবে নেয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি । সরকারীভাবে নারীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছরই প্রথম স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা, গবেষণা, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন এবং রাজনীতি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাঁচজন বিভিন্ন নারীকে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক’ প্রদান করা হবে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ পদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।