দ্রুত বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী
দেশে করোনার পাশাপাশি চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। দেশে চলতি জুলাই মাসের গত ২৫ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৩০৭ জন রোগী। এর মধ্যে ৯৯ শতাংশই ঢাকায়। গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টার হিসাবে দেশে নতুন করে ভর্তি হয়েছে ১০৫ জন ডেঙ্গু রোগী, যাদের মধ্যে ১০২ জন ঢাকায় এবং বাকি তিন জন অন্য জেলায়।
সারা দেশ মিলে গতকাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল ৪৬০ জন রোগী, যাদের মধ্যে ৪৫৪ জন ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিল। এ ছাড়া চলতি ডেঙ্গু মৌসুমে এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনার জন্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) কাছে রয়েছে বলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্ষায় পানি জমে থাকার কারণে এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এডিস মশার প্রজনন বেড়ে গেছে; যা থেকে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটছে। এ ক্ষেত্রে ঢাকায় সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম আরো জোরালো করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন হলে স্থাপিত ফিল্ড হাসপাতালের কাজ দেখতে গিয়ে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের ডেঙ্গু প্রসঙ্গে বলেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনে এ সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে।
গতকাল অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, সব হাসপাতালে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু টেস্ট করতে বলা হয়েছে। সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে বিনা মূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার অ্যান্টিজেন কিটের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। জ্বরের উপসর্গ থাকলেই করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু টেস্ট করাও জরুরি।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এডিস নিধনে শুরু করেছে বিশেষ অভিযান। আজ সোমবার থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১০টি অঞ্চলে একযোগে শুরু হচ্ছে মশক নিধনের বিশেষ মোবাইল কোর্ট। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে এই অভিযান চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এবার মোট ১০টি মোবাইল কোর্ট অভিযান চালাবে মানুষের বাসাবাড়ি, নির্মাণাধীন ভবন এবং সরকারি বাসভবনের আঙিনার মধ্যে।
সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, প্রতি অঞ্চলে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেত্বত্বে আট জনের টিম কাজ করবে এ অভিযানে। সঙ্গে থাকবেন কাউন্সিলর এবং নারী কাউন্সিলররা। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতে মাইকিংও চলবে। নতুন কোনো আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন এ অভিযান চলবে বলে জানিয়েছে ডিএসসিসি।
ডিএসসিসি বলছে, সেপ্টেম্বরে গিয়ে মশার ওষুধ পরিবর্তন করবে তারা। স্বাভাবিকভাবে তারা ২১ বা ৪১-৪২ দিন পর পর ওষুধ পরিবর্তন করে যেন মশার প্রতিরোধ শক্তি তৈরি না হয়। বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ মশা মারার জন্য ম্যালাথিয়ন ব্যবহার করছে তারা। আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে গিয়ে এটি পরিবর্তন করে ডেক্সট্রামেট্রিন দেবে সংস্থাটি এবং ২১ দিন পর আবারও ম্যালাথিয়ন দেবে।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বলেন, ‘ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যেসব রোগী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, তাদের তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক ঘণ্টার মধ্যে সিটি করপোরেশনকে দেবে। পরে আমরা সেসব রোগীর বাসার ৪০০ মিটারের মধ্যে চিরুনি অভিযান চালাব। রোগী ট্রেসিং করে তার বাড়ির ৪০০ গজের মধ্যে চিরুনি অভিযান করা এবং প্রতিদিনের মোবাইল কোর্ট করার ফলে ডেঙ্গু কমবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
রোগী বাড়ার আগেই ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার ছিল কি না এমন প্রশ্নে ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘আগে দরকার ছিল, কিন্তু আমাদের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট ছিল না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আজ (রবিবার) ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট পেলাম। ফলে কাল থেকে আমরা মাঠে নামব।’
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘মূল কথা হলো, মানুষের সচেতনতা দরকার। শুধু সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আমরা রোজ পরীক্ষা করছি। সেখানে যদি আমরা দেখি মশার শরীরে আমাদের ওষুধের প্রতিরোধশক্তি তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে, তাহলে তখনই আমরা ওষুধ পরিবর্তন করে ফেলব।’