তোফায়েল আহমেদ সব সম্পত্তি দান করবেন
তোফায়েল আহমেদ এমপি, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, তিনি তার সমুদয় সম্পত্তি জনকল্যাণে বিশেষত দরিদ্র মানুষের কল্যাণে দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘আমি এখন জীবন সায়াহ্নে উপনীত, জীবনের এই পর্যায়ে আমার তেমন কোনো বৈষয়িক চাহিদা নেই। আমি অনেক সম্পদশালী ব্যক্তি নই, তবে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সাধারণ মানুষের কল্যাণে দান করবো।’
বন্ধু-বান্ধবদের সহযোগিতায় এর আগেও তিনি একটি ট্রাস্টের আওতায় জনহিতকর কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন। এখন নিজের সম্পত্তি দান করে ‘তোফায়েল আহমেদ ফাউন্ডেশন’এর মাধ্যমে এই কর্মকাণ্ডগুলো বিস্তৃতভাবে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ এই সহচর বলেন, ‘আমার মেয়ে তার সম্পত্তি ফাউন্ডেশনে দান করে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে।’ সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং বর্তমানে ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য।
তোফায়েল আহমেদ এমপি ১৯৪৩ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলায় জন্মগ্রহণ করেন। ৬০’র দশকের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন তিনি এক কিংবদন্তি ছাত্রনেতায় পরিণত হন। ৯ মাসের দীর্ঘ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একাত্তরে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
তোফায়েল আহমেদও ওই সময় অন্যতম মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন। সমূদয় সম্পত্তি দান করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি তাকে অনুপ্রাণিত করেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আধ্যাত্মিক অনুভূতি থেকে যদি বলি, কোনো মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় তার সম্পত্তি সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারেন না।’
সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আপনি সম্ভবত জানেন, আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট তাঁর নিকটজনদের বলেছিলেন- মৃত্যুর পর তাঁকে যখন কফিনে করে কবরে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন যেন তাঁর দুটি হাত কফিনের বাইরে বের করে রাখা হয়। যাতে মানুষ জানতে পারেন যে, তিনি খালি হাতে দুনিয়ায় এসেছিলেন এবং খালি হাতেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছেন।’
তোফায়েল আহমেদ ফাউন্ডেশন মূলত সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানে হাসপাতাল, বৃদ্ধাশ্রম এবং শিক্ষাবৃত্তি কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘এর আগে আমি স্কুল, কলেজ, নান্দনিক একটি মসজিদ ও অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছি। ফাউন্ডেশন এখন এসব কল্যাণমূলক কার্যক্রমকে প্রসারিত করবে।’ রাজনৈতিক এই ব্যক্তিত্ব বলেন, তার গ্রামের কিছু স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে, ১৮০ বিঘা জমির উপর একটি খামার এবং ঢাকার বনানীতে স্ত্রীর মালিকায় একটি বাড়ি রয়েছে। এগুলো এখন ফাউন্ডেশনের নামে থাকবে।
তোফায়েল আহমেদ জানান, এর আগেও তিনি জনহিতকর কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট দান করেছেন।
তোফায়েল আহমেদ মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) অন্যতম সহ-সভাপতি (ভিপি) মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সাল পর্যন্ত শিল্পমন্ত্রী, ২০১৩-২০১৪ সালে গৃহায়ন ও গণপূর্ত ও শিল্পমন্ত্রী এবং আবার ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বাণিজ্যমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেন।