জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সর্বসম্মতিক্রমে রেজুলেশন গৃহীত
সদস্য রাষ্ট্রগুলোর তীব্র মতভেদের মধ্যেই সোমবার জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা বিষয়ক একটি রেজুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। জাতিসংঘ ফোরামে রোহিঙ্গা বিষয়ক এটাই কোনও রেজুলেশন যা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হলো।
জাতিসংঘ ফোরামে বিনা ভোটে রোহিঙ্গাবিষয়ক কোনো রেজুলেশন সবার সম্মতিতে এই প্রথমবারের মতো গৃহীত হলো। এমনকি ২০১৭ সালে যখন রোহিঙ্গাদের ওপর চরম নির্যাতন চলছিল তখনও রোহিঙ্গাদের পক্ষে কোনো রেজুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়নি। সেই বিবেচনায় এবারের ঘটনাটি বাংলাদেশের জন্য বড় একটি মাইলফলক।
বাংলাদেশের কূটনীতিকরা গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে নিবিড় ও সুদীর্ঘ আপস-আলোচনা পর এটি সম্ভব হয়। কূটনীতির বিচারে এটি একটি বড় অর্জন। কারণ মিয়ানমারের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে প্রথম থেকেই প্রস্তাবের বিভিন্ন বিষয়ে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে প্রবল মতভেদ ছিল।
বাংলাদেশের উদ্যোগে ইসলামিক সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি) এর সব সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক রেজুলেশনটি পেশ করা হয়।
একদিকে ওআইসির সদস্য রাষ্ট্র ইরান, মিশর ও অন্যান্যরা মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রেজুলেশনে কোনও কিছু অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধী ছিল। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো রাজনৈতিক পরিস্থিতির উল্লেখ না থাকলে অ্যাবস্টেইন (ভোটদানে বিরত থাকা) করার হুমকি দেয়। তৃতীয় পক্ষ চীন ও রাশিয়ার মতো বড় শক্তি যেকোনো ধরনের রোহিঙ্গা রেজুলেশন সবসময় বিরোধিতা করে আসছে।
জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদের ৪৭তম অধিবেশনে বাংলাদেশের উদ্যোগে ইসলামিক সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি) এর সব সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক রেজুলেশনটি পেশ করা হয়।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মো. মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে জেনেভাস্থ বলেন, মানবিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মম নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমানা উন্মুক্ত করে দেন। তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, গত চার বছরেও মিয়ানমারের অসহযোগিতা ও অনীহার কারণে অদ্যবধি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি।
প্রতিনিধি মো. মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, জাতিসংঘের আলোচ্যসূচিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ও রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়টি সক্রিয় আলোচনায় রাখা প্রয়োজন। কেবল মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব সম্প্রদায়ের রোহিঙ্গাদের প্রতি মনোযোগ হারানো উচিত হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে নিজেদের আবাসস্থলে ফেরত পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।