খালেদা জিয়ার লিভারে জটিলতা, দেশে চিকিৎসা নেই : চিকিৎসক
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও পরবর্তী জটিলতায় ৫৩ দিন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গুলশানের বাসায় ফিরেছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এমনিতে শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও লিভারের (যকৃৎ) জটিলতায় ভুগছেন। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক দাবি করেছেন, এই চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই।
আজ শনিবার রাত ৮টা ৩২ মিনিটে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় প্রবেশ করে। এর আগেই সেখানে প্রবেশ করেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারসহ পরিবারের লোকজন৷
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বাসায় আসার পর গণমাধ্যমে তাঁর সবশেষ অবস্থা জানান ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এফ এম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার লিভার সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। এর চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই। এখন থেকে তিনি বাসায় চিকিৎসকদের নজরদারিতে থাকবেন, বাসায় তাঁর চিকিৎসা চলবে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় বিএনপির চেয়ারপারসনকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে খালেদা জিয়া বারবার সংক্রমিত হচ্ছিলেন। আমরা খুব সহজেই নির্ণয় করতে পেরেছি এই জীবাণু কোত্থেকে এসেছে। এটা হাসপাতালে তৈরি। হাসপাতাল উনার জন্য এই মুহূর্তে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।’
খালেদা জিয়া এখন স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন তাই বাসায় আনা হয়েছে। দু-তিন সপ্তাহ পরে উনাকে আবার নিয়মিত কিছু পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেওয়া লাগতে পারে’, যোগ করেন এফ এম সিদ্দিকী। এ সময় সেখানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের গণমাধ্যম শাখার সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আজ শনিবার রাত সোয়া ৮টায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী গাড়ি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল ত্যাগ করে। গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় গিয়ে পৌঁছে রাত ৮টা ৩২ মিনিটের দিকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুলিশের দুটি গাড়ি, তারপরে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী-সিএসএফের একটি গাড়ি সামনে থেকে খালেদা জিয়ার গাড়িটিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ির পেছনে ছিল সিএসএফের কয়েকটি গাড়ি। তারপর ছিল বিএনপির মহাসচিব ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের গাড়ি।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহর হাসপাতাল থেকে গুলশানের ‘ফিরোজা’য় রওয়ানা হওয়ার আগে থেকেই সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ৷ খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সঙ্গে গণমাধ্যমের গাড়িকেও না যেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শরীরে গত ১১ এপ্রিল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। একইসঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসনের বাসভবন ‘ফিরোজা’র আরও আটজন ব্যক্তিগত স্টাফও করোনায় আক্রান্ত হন। তাঁরা সবাই বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু হয়। এরপর ২৭ এপ্রিল তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ২৮ এপ্রিল খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এই মেডিকেল বোর্ডের নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার।
এর মধ্যে ৩ মে খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাঁকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৬ মে তিনি করোনামুক্ত হন। এরপরও তাঁর শারীরিক জটিলতা থাকায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতের রায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। তারপর নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে শুরু হয় তাঁর কারাজীবন।
একই বছরের ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছরের আদেশ দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৫ নম্বর অস্থায়ী বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বছরের বেশি সময় বন্দিজীবন কাটানোর পর চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে আসা হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিন ব্লকের প্রিজন সেলে।
গত বছর সারা বিশ্বে মহামারি করোনা ছড়িয়ে পড়লে শর্তসাপেক্ষে সরকার প্রধানের নির্বাহী আদেশে জামিন পান খালেদা জিয়া। প্রায় ২৫ মাস (কারাগার ও বিএসএমএমইউ’র প্রিজন সেল) কারাভোগের পর তিনি ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্ত হন। বিএসএমএমইউ প্রিজন সেল থেকে মুক্তির পর গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় অবস্থান করছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।