আহমাদিনেজাদ নির্বাচন থেকে ছিটকে গেলেন
ইরানে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই ১৩ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে বাদ পড়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ইরানের সাবেক রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ।
ইসলামি বিপ্লবের পক্ষের জনপ্রিয় এই নেতাকে কী কারণে নির্বাচনে লড়তে দেওয়া হলো না, তা নিয়ে সরব ইরান এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০০৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালীন খানিকটা স্বাধীনচেতা মনোভাবের জন্য সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির বিরাগভাজন হওয়াই কাল হয়েছে আহমাদিনেজাদের জন্য।
গেলো ১২ মে আচমকাই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য নিজের নাম নিবন্ধন করেন ইরানের সাবেক আলোচিত প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। দেশটিতে আসন্ন নির্বাচনে শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে সাবেক এই রক্ষণশীল প্রেসিডেন্টকে নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা।
ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিল কিন্তু অনেকটাই অবাক করার মতো সিদ্ধান্ত নেয়। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করে সাবেক এই রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদকে।
২০০৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকা ইসলামি বিপ্লবের পক্ষের জনপ্রিয় এই নেতাকে কী কারণে বাদ দেওয়া হলো, তা নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা। মূলত ইরানের বড় কোন সিদ্ধান্ত একক ক্ষমতাবলে নিয়ে থাকেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি।
২০০৫ সালে তার সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। দায়িত্ব নেওয়ার পর ইরানের পরমাণু কর্মসূচি গতিশীল করা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কট্টর অবস্থান নিয়ে ব্যাপক আলোচিত হন তিনি। এছাড়াও তার অনাড়ম্বর জীবন-যাপনও নজর কেড়েছিল সবার।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, কিছুটা স্বাধীন হয়ে দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছিলেন আহমাদিনেজাদ। যার ফলে তার কিছু সিদ্ধান্ত সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির মতের বিরুদ্ধে যায়। যা ভালোভাবে নেননি খামেনি।
যদিও কট্টর পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থানের কারণে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যায় তাকে। আর এ কারণেই ২০০৯ সালেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন মাহমুদ আহমেদিনিজাদ।
তবে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে পরমাণু, বিদেশ নীতি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসহ বেশকিছু ইস্যুতে সর্বোচ্চ নেতা এবং গার্ডিয়ান কাউন্সিলের সঙ্গে আহমেদিনিজাদের বিরোধ আরো তীব্র হয়। যদিও কঠোর গোপনীয়তার কারণে বিষয়টি সে সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের চোখ এড়িয়ে যায়।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে মতের মিল না থাকাতেই ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় তাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও আসন্ন নির্বাচনের দৌঁড় থেকেও বাদ দেওয়া হলো পশ্চিমাবিরোধী এই কট্টর নেতাকে।
ইরানি বিশ্লেষকদের মতে, আদর্শগত দিক থেকে বিস্তর মিল থাকলেও সর্বক্ষেত্রে আনুগত্য প্রকাশ না করাতেই আহমেদিনিজাদকে নিয়ে কোন ঝুঁকি নিতে চাননি আয়াতুল্লাহ খামেনি।
স্বভাবতই এ বিষয়ে ইরানি গার্ডিয়ান কাউন্সিল কোন বক্তব্য না দিলেও সূত্রগুলো বলছে, প্রেসিডেন্ট এবং সর্বোচ্চ নেতার মধ্যকার দূরত্বকে যাতে পশ্চিমারা কাজে না লাগাতে পারে, সেজন্যই আহমেদিনিজাদকে আসন্ন নির্বাচনে লড়তে দেওয়া হয়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, এবারো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ না নিতে পারায়, রাজনৈতিক ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে গেলো ৬৪ বছর বয়সী এই স্পষ্টবাদী সাবেক প্রেসিডেন্টের।