বিজয়নগরে পীরের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে তোলপাড়
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে এক পীরের চিকিৎসা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে তোলপাড় চলছে। উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কালাছড়া গ্রামের শাহসুফি হযরত মন্তাজ উদ্দিন আওলিয়ার মাজারের তাবরিজ সরকার নামের এক পীর পুকুরের পানিতে চুবিয়ে রোগীদের অপচিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তার অপচিকিৎসায় এক রোগী মারা যাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালাছড়া গ্রামের খায়রুল আলম সরকারের ছেলে তাবরিজ সরকার। খায়রুল আলম সরকার বিভিন্ন রোগের ঝারফোঁক করতেন। পিতার থেকে সেই পেশায় জড়িয়ে পড়লেন তাবরিজ সরকার। তাবরিজ সরকার চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের তিলের তেল পড়া ও পুকুরের পানিতে চুবিয়ে চিকিৎসা দিতেন।
গত রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে কুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলা থেকে কাউসার (৩৫) নামের এক মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে তাবরিজের কাছে চিকিৎসা করতে নিয়ে আসে তার স্বজনরা। দীর্ঘ ২ ঘন্টা পর কাউসারের পরিবারের সদস্যরা পীর তাবরিজের দেখা পান। তাবরিজ চিকিৎসা নিতে আসা কাউসারকে তার বাড়ির পাশের একটি নালায় প্রায় এক ঘন্টায় বার বার ডুবানো হয়। এতে মারা যায় রোগী কাউসার। পরদিন মরদেহটি পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে নিয়ে যায়।
এরপর এই ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন কথা এলাকায় ছড়ানো হয়। কবিরাজ তাবরিজের ভক্ত হওয়ায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। কিন্তু এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
শুক্রবার সরেজমিনে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কালাছড়া গ্রামে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা হয় সত্য সমাচার অনলাইন নিউজের এই প্রতিবেদকের। ওই পাগলকে পানিতে চুবিয়ে মেরে ফেলছে তাবরিজ পীর এমন অভিযোগ করে স্থানীয় বাসিন্দা রুস্তম মিয়া জানান, পীরের সামনে মাজারের পাশে একটি নালায় রাতের বেলা চুবিয়ে ওই পাগলকে মেরে ফেলা হয়েছে। এর আগেও অনেকবার এমন করছে তাবরিজ পীর। কিন্তু এই ঘটনায় ধামাচাপা দেওয়া হয়।
আরেক বাসিন্দা নজির মিয়া জানান, কবিরাজ তাবরিজের বাবার আমল থেকে এখানে রোগীদের তেল পড়া দেওয়া হতো। তেমন ভাবে তাবরিজের পীরের কাছে তেল পড়ার জন্য অনেকেই আসেন। তেল পড়ার জন্য সেদিন কুমিল্লা থেকে সেদিন এক পাগলও আসছিল। শুনেছি পাগল নিজেই পানিতে ঝাপিয়ে পড়েছে।
অভিযুক্ত পীর তাবরিজ সরকারের বড় ভাই দোহা সরকার বলেন, আমাদের দরবার শরীফে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষ মানত নিয়ে ও চিকিৎসার জন্য আসেন। তেমনি ভাবে গত রোববার রাতে কুমিল্লা থেকে একটি পাগল দরবার শরীফে আসে। আমি রাতে এসে দেখি একটা পাগল আসছে। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,’এইখানে কেন আসছেন’?
পাগলের সাথে থাকা একজন লোক বলেন, ‘আমরা আরও একবার এসেছিলাম পীরের তেলপড়ার জন্য। বিভিন্ন জায়গা থেকে পীরের কাছে মানুষ আসে তাই আমরাও এসেছি। আপনাদের এইখানে আসলে রোগী ভালো হবে তাই এসেছি’।
বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘মাজারের এমন একটি ঘটনা এলাকাবাসী থেকে শুনেছি। বিষয়টা আমাদের এলাকার জন্য লজ্জাজনক। আমি খোঁজখবর নিচ্ছি’।
অভিযুক্ত পীর তাবরিজ সরকার বলেন, ‘কুমিল্লার কাউসারের সাথে আসা লোকজন আমাকে দেখালো তার সারা শরীরে দাগ। আবার আমাকে বললো তারে বাইন্দা রাখে এ কথা বলতেই সে দূরে পানিতে নেমে ডুব দেওয়া শুরু করে। পানি থেকে উঠাতে গেলেই সে কেমন যেন শুরু করে। তারপরে আমি তাকে একটা গাড়ি ঠিক করে দেই তখন তারা চলে যান।
তিনি আরও বলেন, ‘দরবার শরীফ এখন আমি পরিচালনা করি। আমি রোগীকে তেল ও পানি দিয়ে দেই। এই বিষয়ে মৃত কাউসারের ফ্যামিলীর কোন অভিযোগ নেই। এইটা নিয়ে আমার এলাকার কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে’। মৃত কাউসার এর পরিবারের সদস্যদের মুঠোফোন নাম্বার চাইলে তাবরিজ বলেন,’ নাম্বার আছে এখন দিতে পারবো না আমি আপনাকে কিছুক্ষণ পর দিচ্ছি’। এরপর থেকে কথিত পীর তাবরিজ সরকার এই প্রতিবাদকের ফোন কল রিসিভ করেনি।
এই বিষয়ে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মির্জা হাসান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। মৃত ব্যক্তির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা লিখিত কোন অভিযোগ দেয়নি, অভিযোগ দিলে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্হা নিব। এ ধরনের চিকিৎসা কোন পীর দিতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।