অগ্রিম আয়করে ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে : সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই
ব্যবসায়ীদের শীর্ষসংগঠন এফবিসিসিআই চলতি বছর বিদ্যমান ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।
সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি সরকার। বরং আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে উল্টো ২০ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রিম আয়কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এফবিসিসিআই মনে করছে, এটি আরোপের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে। সঙ্গত কারণে অগ্রিম আয়কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারে জোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। শুধু তা-ই নয়, অগ্রিম আয়কর (এটিআই) বেআইনি বলেও মনে করছে এফবিসিসিআই।
গতকাল শনিবার রাজধানীর মতিঝিলের এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এ দাবি জানান।
সংগঠনের সভাপতি বলেন, আমাদের মন্তব্য পরিষ্কার। অপ্রদর্শিত অর্থ থাকলে একটা সময় বেঁধে উৎপাদনশীল খাতে, যেখানে কর্মসংস্থান হবে, যেখানে ইন্ডাস্ট্রি হতে পারে সেসব জায়গায় সরকার বিনিয়োগ করার একটা সুযোগ দিতে পারে। তবে এটা সারা জীবনের জন্য দেওয়া উচিত হবে না।
সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন আরও বলেন, সরকার যদি সারা জীবনের জন্য অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়, তা হলে সত্যিকার অর্থে যারা নিয়মিত ট্যাক্স দেন, তারা নিরুৎসাহিত হবেন। আমরা তো আসছে বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চাইনি।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল, তার পুরোটা এখনো দেওয়া হয়নি। কেন দেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসব। এখন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে আমরা আরও একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, মোট প্রাপ্তি তিন কোটি টাকা বা ততোধিক হলে ব্যক্তি আয়করদাতাদের ন্যূনতম কর হার দশমিক ৫০ থেকে কমিয়ে দশমিক ২৫ করা হয়েছে। সব প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম কর হার দশমিক ২৫ করার দাবি জানাচ্ছি।
এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দিতে চান, ট্যাক্স দিতে চান; সবই দিতে চান। ভ্যাট আদায়ে একটা মার্কেটে একশটা দোকান থাকলে ১০টা দোকানে মেশিন বসানো হলো। আমরা বলছি দিলে সবাইকে দেবেন, না দিলে দেবেন না। কত টাকা লাগে এখানে। বেশি টাকার তো দরকার নেই। সরকার এতো টাকার বাজেট দিচ্ছে, এতো কিছু করছে, আমি তো মনে করি এখানে বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত।
তিনি বলেন, সরকার এখানে এক টাকা ইনভেস্ট করলে ১০০ টাকা পাচ্ছে। তা হলে ইনভেস্ট কেন করছে না? কালো টাকার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দেওয়া উচিত। এটা সব সময়ের জন্য দেওয়া হলে যারা নিয়মিত ভ্যাট দেন, তারা নিরুৎসাহিত হবেন।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা ভ্যাট, ট্যাক্স দিতে চান; কিন্তু পদ্ধতিটা সহজ হওয়া উচিত। সরকার এতো বড় বাজেট দিচ্ছে, এতো কিছু করছে। আমি তো মনে করি এ জায়গায় (ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়া) বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে বেশ কিছু দাবি তোলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- আমদানি পর্যায়ে ভ্যাটের আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা, আগামী এক বছরের জন্য ই-কমার্সকে উৎসে করের আওতাবহির্ভুত রাখা, কাটার সেকশন ড্রেজারকে ক্যাপিটাল মেশিনারি হিসেবে ১ শতাংশ শুল্কে আমদানির সুযোগ দেওয়া; বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের আয়ের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহার করা; সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি এবং ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির জন্য সব উপজেলা পর্যায়ে আয়কর ও ভ্যাট অফিস স্থাপন করা; সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ধরনের কাজে টিন নম্বর ব্যবহার করার পাশাপাশি ট্যাক্স পেমেন্টের প্রমাণ বা ডকুমেন্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে; জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পলিসি উইং এবং বাজেট বাস্তবায়ন উইংকে পৃথক করা এবং মূল্য সংযোজন কর আইন সহজীকরণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং এফবিসিসিআইয়ের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করারও দাবি তোলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, ভাইস প্রেসিডেন্ট এমএ মোমেন, আমিন হেলালী, হাবিব উল্লাহ ডন, সালাউদ্দিন আলমগীর, এমএ রাজ্জাক খান উপস্থিত ছিলেন।