নো ভোট টু বিজেপি’ আবেদনের প্রতি ঐতিহাসিক গণ রায় বাংলার
বিহারের বুকে চমকে দেওয়া ‘লাল ঝড়’ তোলা সিপিআইএম (লিবারেশন) নির্বাচনে ১২টি আসনে নিজেরা লড়াই করে একটিও আসন পায়নি। বিভিন্ন আসনে বামপন্থী প্রার্থীদের সমর্থন করে মূলত বিজেপি বিরোধী ভোটের উপরেই আলোকপাত করেন দলটির সর্বভারতীয় সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। ফলাফল বিজেপির অনুকুলে না যাওয়ায় শাসক পশ্চিমবঙ্গবাসী ও তৃণমূল কংগ্রেসকে অভিনন্দন জানালেন আলোচিত বাম নেতা।
দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের বিব়ৃতি সিপিআইএম (লিবারেশন) তাদের ফেসবুকে প্রকাশ করেছে । তাতে তিনি লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের এখনও পর্যন্ত যা ফলাফল ও প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তা ঐতিহাসিক।
বিহারের নির্বাচনের পর এই দফার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের এই স্পষ্ট বিজেপি-বিরোধী রায় গোটা দেশ জুড়ে সংবিধান, গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে বাঁচানোর লড়াই ও বিবিধতা ও বহুত্বভিত্তিক ভারতীয় চেতনাকে বিরাটভাবে প্রেরণা ও শক্তি যোগাবে।
এই রায় বিজেপির ক্ষমতা দখলের আগ্রাসী আস্ফালনের বিরুদ্ধে বাংলার গণ রায়। গণহত্যা করে, ভয় দেখিয়ে, দলবদল করিয়ে ক্ষমতা দখলের চক্রান্তকে বাংলা রুখে দিয়েছে।
এই রায় সংকীর্ণতা ও বিদ্বেষের রাজনীতির বিরুদ্ধে বাংলার উদার ঐতিহ্য ও সম্প্রীতির বলিষ্ঠ প্রত্যুত্তর। কর্পোরেট লুন্ঠনের উপর ভিত্তি করে মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার বিরুদ্ধে মানুষের অস্তিত্ব, মানসম্মান ও অধিকারের লড়াইয়ের জোরালো প্রতিফলন।
সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবার্ষিকীতে গণতন্ত্র ও বাংলার ঐতিহ্যের সমর্থনে এই স্পষ্ট রায়ের জন্য বাংলার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সচেতন জনগণকে গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসকে জানাই অভিনন্দন।
‘একুশের ডাক’ ও ‘নো ভোট টু বিজেপি’ অভিযানে সাড়া দিয়ে বাংলার ছাত্র-যুব সমাজ ও গণ আন্দোলনের কর্মী বাহিনী রাজ্য জুড়ে মানুষের কাছে গণতন্ত্রের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন।
সর্বভারতীয় কৃষক আন্দোলনের প্রতিনিধিরা সর্বনাশা কৃষি আইনের বিরুদ্ধে রাজ্যের জনগণকে আবেদন জানিয়েছেন। এই স্পষ্ট গণ রায়ের পেছনে এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা আগামী দিনে গণতন্ত্রের পক্ষে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করবে।
রাজ্যের ব্যাপক বামপন্থী কর্মীবাহিনীর কাছে আমাদের আবেদন এই রায়কে গণতন্ত্রের জয় এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষের বলিষ্ঠ প্রতিবাদ হিসেবে দেখুন।
বাংলার কংগ্রেস-বামফ্রন্ট নেতৃত্বকে অবশ্যই এই ফলাফলের উপর দাঁড়িয়ে পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। আশা করব তৃণমূল কংগ্রেসের তৃতীয় দফার সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও গণতন্ত্রের পরিবেশকে সম্মান জানিয়ে চলবে।
এই মুহূর্তে রাজ্য এবং দেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন অতিমারিকে পরাজিত করা, কোভিড আক্রান্ত মানুষের জীবন বাঁচানো ও সেবা করা, মানুষের পাশে দাঁড়ানো। দীর্ঘ নির্বাচনী প্রক্রিয়া পশ্চিমবঙ্গকে বিশেষভাবে বিপন্ন করে তুলেছে। এই বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে সরকার ও সমাজ সমানভাবে এগিয়ে আসুক।”