ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় আজ প্রতিবাদ কর্মসূচি।।
সত্য সমাচার ডেস্কঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের তিন দিনের তাণ্ডবের মধ্যে প্রেসক্লাব ও সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে কর্মসূচি দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিকরা।
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) সাংবাদিকরা শহরে বিক্ষোভ করবেন বলে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর ঘিরে গত শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বড় মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম থেকে কয়েক হাজার হেফাজত কর্মী লাঠিসোটা নিয়ে থানা ও বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা চালায়। এই সময় আইনশৃঙ্খালা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে চার জন নিহত হন।
এরপর ওইদিন বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে তাণ্ডব শুরু করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কওমী মাদ্রাসাছাত্ররা। তারা রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করে, ভাংচুর চালায়।
গত শনিবারও তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে তাণ্ডব চালায়, যেখানে অন্তত ছয় জনের প্রাণহানি হয়।
পরেরদিন রোববার হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতাল তারা বিভিন্ন সরকারিসহ নানা স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা করে। এদিন আরও তিন জন নিহত হন।
এ হামলার শিকার হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব সাংবাদিক ও বিভিন্ন স্পটে থাকা প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদ কর্মী ও ক্যামেরা পারসনরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন জানান, হেফাজতের সহিংসতার তৃতীয় দিন রোববার ভিডিও এবং ছবি ধারণ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক।
এদিন হরতাল চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙ্গচুর করা হয় এবং এর আগে হামলাকারীরা প্রেসক্লাবের সিসি ক্যামেরা খুলে নেয় বলে অভিযোগ করেন সাধারণ সম্পাদক।
ঘটনার খবর পেয়ে প্রেসক্লাবে ছুটে আসার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সংগ্রামী সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামির ওপর হামলা চালানো হয়।
রিয়াজ উদ্দিন জামির বরাত দিয়ে বিজন বলেন, জামিকে দেখার পর হামলাকারীরা বলেন, ‘তুই প্রেসক্লাব সভাপতি, তুই আওয়ামীলীগ’ তাকে প্রথমে রাম দা দিয়ে মাথায় কোপ দেয়। সেটি লক্ষ্যচ্যুত হলে আরেকজন লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে।
প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামিকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে জানান জাবেদ রহিম বিজন।
হরতালের দিন প্রেসক্লাবে কয়েক দফা হামলা হয়। এই সময় ক্লাবে জেলার অর্ধশত সাংবাদিক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। অনেকেই সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন।
সরেজমিনে জানা যায়, রোববার সকালে নিউজ সংগ্রহ করতে গিয়ে শহরের পৈরতলায় সাংবাদিক আবুল হাসনাত রাফি হরতাল সমর্থকদের হামলার শিকার হন। তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় এবং মারধর করে হরতাল সমর্থকরা।
শনিবার বিকালে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল কভার করতে গিয়ে মাদ্রাসা ছাত্রদের ছুড়ে মারা ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন এটিএন নিউজের ক্যামেরা পারসন সুমন রায়। হামলায় তার দাঁত ভেঙে যায়। এর পরপরই টিএরোড মাদ্রাসা মোড়ে মান্নান ম্যানশনে থাকা যমুনা, আরটিভি ও মাইটিভির অফিসে চড়াও হয় মাদ্রাসা ছাত্ররা। তাদের ইটপাটকেলে অফিসের কম্পিউটারসহ নানা যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই সময় নিউজ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রেসক্লাবে সামনে দৈনিক সত্য সমাচারের স্টাফ রিপোর্টার মো. আজহার উদ্দিন ধাওয়ার শিকার হন।
শুক্রবার ভাদুঘরে মাদ্রাসা ছাত্ররা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করার সময় এর ভিডিওচিত্র ধারণ করতে গিয়ে এনটিভির ক্যামেরা পারসন সাইফুল ইসলাম ধাওয়ার মুখে পড়েন। এরপর ক্যামেরাটি একজন বিজিবি সদস্যের হাতে দিয়ে সাইফুল রক্ষা পান। ইটিভির ক্যামেরা পারসন রাসেলও ধাওয়ার শিকার হন এখানে।
ওইদিনই রেলস্টেশন মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন নিউজ টুয়েন্টি ফোরের সাংবাদিক মাসুক হ্নদয়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে ইটিভির সাংবাদিক মীর মো. শাহিনও হামলার শিকার হন। একাত্তর টিভির জালাল উদ্দিন রুমি ও আজকালের খবর প্রতিনিধি মোজাম্মেল চৌধুরী কাজ করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হন। তাদের মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও চিত্র কেটে মোবাইল সেট ফেরত দেওয়া হয়।
প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন বলেন, গত ৪ দিনের আন্দোলন ও সহিংসতায় সাংবাদিকদের কাজে প্রচণ্ড বাধা দেওয়া হয়। তাদের উপর আক্রমণ করা হয়। ভিডিও ক্যামেরা দূরে থাক মোবাইলে কাজ করতে গিয়েও হামলার শিকার হন সাংবাদিকরা।
প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় প্রেসক্লাব ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিকরা।