ইউরোপের নিরাপত্তাই হলো তুরস্কের নিরাপত্তা: হাঙ্গেরী
সোমবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক সভার এক বিরতিতে হাঙ্গেরীর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজার্টো বলেছেন: তুরস্ক ও ইউরোপের মধ্যেকার সম্পর্কে এ ব্যাপারটির ওপর জোর দেয়া উচিত যে, ইউরোপের নিরাপত্তা তুরস্কের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।
জোটটির উচিত ২০১৬ সালের চুক্তির আওতায় অভিবাসীদের সাহায্যের জন্যে বরাদ্দ বাকি অংশ ছ’ মিলিয়ন ইউরো (৭.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) তুরস্ককে দেয়া। এ অর্থ দেয়া হয়েছিলো – অনিয়মিত অভিবাসীদের ইউরোপমুখী স্রোত রুখতে এবং সিরীয় অভিবাসীদের জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটাতে। আমি তুরস্কের সাথে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ার সমর্থক। একই সাথে তুরস্কে ইউরোপীয় কাস্টম ইউনিয়নের সম্প্রসারণও চাই আমি।
সিজার্টো আসলে বোঝাতে চেয়েছেন যে, তুরস্কে থাকা ৪০ লাখের বেশি অভিবাসীর জন্যে দেশটি সীমান্ত খুলে দিলে ইউরোপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছাবে। ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এ সভায় ইইউ’র সাথে তুরস্কের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করছেন।
এতে তুরস্কে সাথে সংশ্লিষ্ট অজানা বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারা তৈরী একটি প্রতিবেদন মূল্যায়ন করবেন ইউরোপের উচ্চপদস্থ কূটনীতিকরা। তারা ইউরোপের সাথে তুরস্কের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা প্রস্তুত করবেন।
প্রকাশিত খবর অনুসারে, এ প্রতিবেদনে তুরস্কের বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ ও অভিবাসী পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখায় দেশটিকে স্বাগত জানানো হয়। এছাড়া, দেশটির গঠনমূলক আচরণেরও প্রশংসা করা হয়।
এতে পরামর্শ দেয়া হয় – তুরস্কের বর্তমান অর্জনকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার; কাস্টম ইউনিয়নের সম্প্রসারণের মাধ্যমে তুর্কি-ইউরোপীয় বন্ধনকে আরো বিস্তৃত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার এবং ইউরোপীয় অর্থায়নে ‘ইউরোসাম’ ও ‘হরিজন ইউরোপের’ মতো তরুণদের জন্যে যেসব প্রোগ্রাম রয়েছে, সেখানেও তুরস্ককে সম্পৃক্ত করা।
এ প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বৃহস্পতি ও শুক্রবারের ভার্চুয়াল সভায় ইউরোপীয় মন্ত্রীরা অভিবাসনের ওপর ভাষণ দেবেন; ২০১৬ সালে সম্পাদিত ইইউ-তুরস্ক শরণার্থী চুক্তি নবায়ন করবেন এবং তারা এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এদিকে, গতকাল (মঙ্গলবার) ন্যাটোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের আগে ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গের সাথে বক্তৃতা দেয়ার সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন: ন্যাটোর দরকারে তুরস্ককে এ ব্লকে রাখা দরকার। তবে এটা গোপন কিছু নয় যে, এস-৪০০, পূর্ব-ভূমধ্যসাগর এবং তুরস্কের নেয়া কিছু পদক্ষেপের কারণে দেশটির সাথে আমাদের এখতেলাফ হয়েছে। এটিও গোপন নয় যে, তুরস্ক আমাদের দীর্ঘস্থায়ী ও মূল্যবান মিত্র। আমি বিশ্বাস করি, তুরস্ক এমন এক বন্ধু – যাকে ন্যাটোতে রাখার পেছনে আমাদের স্বার্থ রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এতে তুরস্কের স্বার্থও রয়েছে।
স্টলটেনবার্গ বলেছেন, তুরস্কের এস-৪০০ কেনা এবং পূর্ব-ভূমধ্যসাগর পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের অসম্মতি ও উদ্বেগ রয়েছে। একই সময় আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ন্যাটো এমন একটি প্লাটফর্ম – যেখানে মিত্ররা মতদ্বৈততার পরও একই টেবিলে বসবে, আলাপ-আলোচনা করবে এবং সিদ্ধান্ত নেবে কী করা উচিত।
পূর্ব-ভূমধ্যসাগরে তুরস্ক ও গ্রীসের মাঝে উত্তেজনা কমাতে ন্যাটোকে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। এদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইবরাহিম কলিম এবং আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান টেলিফোনে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যু এবং কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে গতকাল আলোচনা করেছেন।
দুজনের মাঝে সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাক ও কোভিড-১৯ মহামারী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুজনই বলেছেন – অভিন্ন স্বার্থ ও কৌশলগত অগ্রাধিকারগুলো নিয়ে এগিয়ে যেতে তুরস্ক ও আমেরিকার মাঝে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হওয়া দরকার।
ওদিকে, সোমবার প্রকাশিত ‘হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ অব দ্য ইউনিয়ন ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসি’-এর প্রস্তুত করা এক প্রতিবেদনে দ্বিপক্ষীয় অনেক ইস্যুতে তুরস্কের গঠনমূলক পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে ইউরোপীয় কমিশন।
অবশ্য এতে পূর্ব-ভূমধ্যসাগর, সাইপ্রাস ও অন্য কয়েকটি ইস্যুকে তুরস্কের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে হুমকি হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ হুমকি লাঘবের জন্যে ইইউ’র প্রতি কিছু পরামর্শও দেয়া হয়। সূত্র: ইয়েনি শাফাক, আনাদোলু এজেন্সি ও ডেইলি সাবাহ।