নিউজিল্যান্ডের ডানেডিনে বাংলাদেশের ইতিহাস পাল্টানোর মিশন
নিউজিল্যান্ডের ডানেডিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর । সেখানকার একটি ইউনিভার্সিটি মাঠেই বাংলাদেশের ওয়ানডে মিশন শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোর ৪টায় ইউনিভার্সিটি ওভালে একটি জয়ের খোঁজে মাঠে মাঠে নামছে তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন দল।
ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে দেশের দুই টিভি চ্যানেল টি স্পোর্টস ও গাজী টেলিভিশন। এছাড়া র্যাবিটহোলবিডিতেও খেলা দেখতে পারবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এবার ইতিহাস পাল্টানোর মিশন নিয়েই নামছে সফরকারীরা। কারণ নিউজিল্যান্ডে কখনোই যে জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ! তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচ খেলেছে ২৬টি। অথচ একটি ম্যাচেও বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ গড়তে পারেনি।
নিউজিল্যান্ডে অদেখা সেই জয় পেতেই এবার মরিয়া বাংলাদেশ দল। লক্ষ্য পূরণে অধিনায়ক তামিম ইকবাল আস্থা রাখছেন পেস আক্রমণের ওপর।
অবশ্য ৫০ ওভারের ম্যাচে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে স্বাগতিকরাই। বাংলাদেশের ১০ জয়ের বিপরীতে নিউজিল্যান্ডের জয় ২৫টিতে। এর মাঝে আবার নিউজিল্যান্ডের মাঠে ১৩ ওয়ানডের সবকটিতেই হেরেছে লাল-সবুজের দল।
সেখানে আরও একটি পরিসংখ্যান ভয় ধরাতে পারে তামিম ইকবালদের! ডানেডিনে এর আগে দুটি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। যার সর্বশেষটি ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। ওই ম্যাচে বাংলাদেশের বোলারদের মেরে ছাতু বানিয়েছিল স্বাগতিকরাই।
নিউজিল্যান্ড ৩৩০ রানের বড় সংগ্রহ গড়েছিল। জবাবে সাব্বিরের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ দল আটকে যায় ২৪২ রানে। এর আগের ম্যাচটি খেলেছিল ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৮৩ রান সংগ্রহ করেছিল। জবাবে ২৭.৩ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে সহজেই এই রান টপকে যায় কিউইরা।
তবে অধিনায়ক তামিম পুরনো পরিসংখ্যান নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। সফরে বাংলাদেশ গেছে ৭ জন বিশেষজ্ঞ পেসার নিয়ে। তাসকিন আহমেদ, আল-আমিন হোসেন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম ও রুবেল হোসেনের সঙ্গে রয়েছেন পার্ট-টাইমার সৌম্য সরকার।
তামিম তাই স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন পেসাররা ভালো করলে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাস বদলানো সম্ভব, ‘সত্যি কথা আমাদের এবারের পেস আক্রমণ পূর্বের চেয়ে যথেষ্ট ভালো। তারা ভালো করবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আশা করছি, প্রথম ম্যাচ থেকেই আমরা লক্ষ্য পূরণ করতে পারবো। পেসাররা যদি ভালো করে, আমাদের জন্য ম্যাচ জেতা অনেক সহজ হয়ে যাবে।’
চোটের কারণে নিউজিল্যান্ড দলে নেই নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ফলে এই সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেবেন টম ল্যাথাম। আবার নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের অনেক খেলোয়াড়ই প্রথমবারের মতো খেলতে গেছেন। ফলে এই পরিস্থিতিটা বাংলাদেশর জন্য সুবিধাজনক হওয়ারই কথা।
কিন্তু কিউই কোচ গ্যারি স্টিড জানিয়েছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ব্যাপারে তাদের ধারণা নেওয়া হয়ে গেছে, ‘তাদের (বাংলাদেশ) হাতে থাকা সম্ভাব্য সব বিকল্প আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি। আমার মনে হয়, আমরা আমাদের সব কাজ সেরে রেখেছি। বাংলাদেশ উন্নতির পথে থাকা একটি দল, এই দলটির গভীরতাও দিন দিন বাড়ছে। আমরা মোটেও তাদের হালকাভাবে নিচ্ছি না। আর আমার মনে হয়, গত তিন-চার বছরে তারা পরিস্থিতির সঙ্গে আরও ভালোভাবে মানিয়ে নিতে শিখেছে।’
এমনিতে ডানেডিনের মাঠ ছোট। এখানে ঘাসের উইকেট হয়ে থাকে। আউটফিল্ডও খুব দ্রুতগতির, আর তীব্র বাতাসের সঙ্গে কনকনে ঠাণ্ডা অনুভূতির বিষয়টি তো থাকছেই। এমন উইকেট তাই পেস বোলারদের জন্য আদর্শ। সে জন্য আগের দিনই তামিম জানিয়েছেন যে, এখানে অন্তত তিনজন পেসার নিয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ, ‘আমি অধিনায়ক হিসেবে অবশ্যই চাই পাঁচজন বোলার নিয়ে নামতে, যেখানে তিন জন বিশেষজ্ঞ পেসার থাকবে। কারণ নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে চারজন বোলার নিয়ে খেলতে নামাটা অনেক সময় কঠিন হতে পারে। আর এখানে মাঠগুলো একটু ছোট হয়, হাই স্কোরিং গেম হয়। তাই আমার কাছে মনে হয় পাঁচজন বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে নামা উচিত। আমরা সেটাই করতে যাচ্ছি।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়েই আইসিসির ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে অংশ নেয় বাংলাদেশ। গত জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০তে হারিয়ে সুপার লিগে পুরো ৩০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে অবস্থান করছে তারা। তাই এই অবস্থায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পুরো ৩০ পয়েন্ট না হলেও তামিমদের আশা ইতিহাস পাল্টাতে অন্তত একটি জয়!