বিদ্রোহী প্রার্থীকে নিয়ে বাড়ছে উত্তেজনা, শঙ্কায় সাধারণ ভোটাররা।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী মানেই নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কা। এই আশঙ্কা এখন সত্যি হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার নির্বাচনে।
বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মেয়র পদে একক প্রার্থী বাছাইয়ে সফলতা দেখালেও কাউন্সিলর প্রার্থী বাছাইয়ে সফল হতে পারেনি দলটি। ফলে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে দলীয় বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
এতে যতটা না সমস্যা, তারচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এলাকায় প্রচার চালানোর সময় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা। আর তাতেই দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে পরস্পরকে হুমকি-ধমকি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং এক পক্ষ আরেক পক্ষকে বিদ্রুপ করার ঘটনা ঘটছে। অস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসার ঘটনাও ঘটছে। আর এতেই দুই পক্ষে সৃষ্টি হচ্ছে উত্তেজনা এবং সংঘর্ষ সৃষ্টির পরিবেশ।
আগামীকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কা তুলে ধরা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদনেও। তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সম্ভাব্য সব স্থানে তারা নজরদারি বাড়িয়েছেন। নির্বাচনকে ঘিরে যে কোনও ধরনের সংঘাত ও সহিংসতা ঘটলে কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে ২৮ ফেব্রুয়ারী আসন্ন পৌরসভার নির্বাচন, পুলিশ যেমনই বলুক না কেন বাস্তবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে বাড়ছে দ্বন্দ্ব সংঘাত। নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদে বিরুদ্ধে উঠেছে নানান অভিযোগ।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারী শহরের দক্ষিণ মৌড়াইল আওয়ামিলীগের অফিসে ককটেল হামলা ও গত ২৫ ফেব্রুয়ারী শহরের মেড্ডায় নৌকার প্রচারণা ও মিছিলে ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ উঠেছিল বিদ্রোহী প্রার্থী হাজী মাহমুদুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে ২টি মামলা হয়েছে।
এদিকে, খুব শিগগির এই বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে নির্বাচনে আরও বেশি সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নগরীর বাসিন্দারা।
বিভিন্ন ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যেসব ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন সেখানেই সরকারি দলের প্রার্থীর সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের নির্বাচনি সহিংসতা ঘটার আশঙ্কা থাকছেন। প্রচারণার সময় জনগণের সামনে সুবোধ সেজে থাকাটাও একটা চ্যালেঞ্জ, তাই ভালো মানুষি রূপ ধরে রাখতে হলেও সবাই সবাইকে তুচ্ছ বিষয়ে ছাড় দিচ্ছেন। তবে নির্বাচনের দিনে সবার যেহেতু জয়টাই মুখ্য, তাই সেদিন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারেন দুই প্রার্থীর অনুসারীরা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রহিছ উদ্দিন বলেন, জেলা শহরের বাসিন্দাদের আমরা সুষ্ঠু, সুন্দর এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচন উপহার দিতে চাই। সেই লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনসহ পুলিশ সদস্যরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার যে ঘটনা ঘটতে পারে সেই বিষয়ে আমরা কঠোর নজরদারি করছি।
প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করছি। সব ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ৪৮ টি ভোটকেন্দ্রে ১৬টি মোবাইল টিম থাকবে। সুষ্ঠু, সুন্দর, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন এমন দাবি করেছে তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, সুষ্টু নির্বাচনের পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হবে।
পৌরসভা নির্বাচনে ১২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাকি ১১টি ওয়ার্ডে মুখোমুখি অবস্থানে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলররা।
উল্লেখ্য, নির্বাচনে মেয়র-কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ৭৭ প্রার্থী, এরমধ্যে মেয়র পদে ৬ জন এবং কাউন্সিলর সাধারন ওয়ার্ডে ৫৬জন এবং সংরক্ষিত ৪টি ওয়ার্ডে ১৫ নারী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
মেয়র পদের প্রার্থীরা হচ্ছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত বর্তমান মেয়র মিসেস নায়ার কবির (নৌকা), বিএনপি’র জহিরুল হক (ধানের শীষ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মো: নজরুল ইসলাম (হাতুড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো: আবদুল মালেক (হাতপাখা), স্বতন্ত্র মাহমুদুল হক ভূইয়া (মোবাইল), আবদুল করিম (নারিকেল গাছ)।
পৌরসভার মোট ভোটার ১ লাখ ২০ হাজার ৫০৪ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫৯ হাজার ৫৬২জন, মহিলা ভোটার ৬০ হাজার ৯৪২জন। ৪৮টি ভোট কেন্দ্রের ৩৩৯ ভোট কক্ষে ভোট দেবেন তারা।