ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক মাসে ৩ শিশু সহ ৭ জন আগুনে দগ্ধ।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় শীতের আগুনের প্রকোপে ও অসচেতনতার কারনে এক মাসে ৩ শিশুসহ জেলায় ৭ জন দগ্ধ হয়েছে।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের সূত্রে এই তথ্য জানা যায়৷
হাসপাতাল সূত্রে ও রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শনিবার (১৬ জানুয়ারী) নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর থেকে এসে ৩৫ বছর বয়সী ছেলের বউ হুসনাকে হাসপাতালের সার্জারী বিভাগে ভর্তি করিয়েছেন জাহানারা। সোমবার বিকেলে জাহানারা বলেন, ওইদিন হুসনা রান্না ঘরে গিয়ে মাটির চুলা থেকে ওড়নায় আগুন লাগে। বুকের ওপরের অনেকটা ও পিঠ জ্বলসে গেছে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে সদর উপজেলার বিরাসার থেকে থেকে বাদল মিয়া এসেছেন ৫০ বছর বয়সী স্ত্রী জুমেরাকে নিয়ে। হাসপাতালের সার্জারী বিভাগে ভর্তি থাকা জুমেরা বলেন, স্বামীর জন্য চা বানাতে গিয়ে বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। পিঠের বেশ অংশ ও মাথার সব চুল পুড়ে গেছে। গত মাসের ২৬ জানুয়ারী মঙ্গলবার ভর্তি হয়।
৩ ফেব্রুয়ারী বুধবার সদর উপজেলায় বুধল গ্রামে নিজ ঘরে আগুন পোহাতে গিয়ে শাহিলা নামের ৭ বছর বয়সী এক শিশুর শরীরের ৫০% অংশ দগ্ধ হয়েছে। গুরুত্বর আহত শাহিলাকে আরশ মিয়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এর বার্ন ইউনিটে ভর্তি করান। ওইখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গত মাসের ১৫ জানুয়ারী শুক্রবার সদর উপজেলার ভাটপাড়ার আব্দুল জলিলের ৫ বছর বয়সী মেয়ে জামিলা ডিম সিদ্ধ দেখতে গিয়ে মায়ের অজানতে গ্যাসের চুলা থেকে আগুন লাগে৷ পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এছাড়া জেলা শহরের মৌড়াইলের ইউসুফ মিয়ার ৪ বছর বয়সী মেয়ে মাইশা গত ৬ ফেব্রুয়ারী শনিবার সকালে আগুন পোহাতে গিয়ে জ্বলছে যায়৷ পরে ওইদিন সকাল ৮টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করায় তার বাবা। মাইশার বুক ও পুরো পেট পুড়ে যায়।
বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর গামের শামীম মিয়ার ১০ বছর বয়সী ছেলে ইয়ামিনের শরীরে গরম পানি পড়ে সারা শরীর জ্বলছে গেছে। গতকাল শনিবার ছেলেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যান শামীম। নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের কাউছারের ২৩বছর বয়সী স্ত্রী রান্নাঘর কাজ করতে গিয়ে শাড়িতে আগুন লাগে। পরে তাকেও চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান কাউছার।
হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্টে ডা. একেএম নিজাম উদ্দিন জানান, বর্তমানে হাসপাতালে ৪জন ভর্তি রয়েছে। যার মধ্যে ২ জনের অবস্থা খুব খারাপ। রোগীর পক্ষ গরীব হওয়ায় তাদেরকে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দুইজন মহিলার ৬০% শরীর দগ্ধ হয়েছে। তাদেরকে ঢাকা নেওয়া হলে ভাল হতো। হাসপাতাল থেকে সকল প্রকার ওষুধ দেওয়া হয়েছে ও প্রতিদিন ড্রেসিংও করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. শওকত হোসেন জানান, গ্যাসের চুলার আগুনে শিশুসহ বৃদ্ধ পর্যন্ত পুড়েছে। সর্বশেষ দু’জন শিশু ও দু’জন মহিলাকে হাসপাতালে সার্জারী বিভাগে ভর্তি রেখেছি। তারা হাসপাতাল থেকে সব ধরনের ওষুধ পাচ্ছে৷ মা-বাবার অসচেতনতার কারনে শিশুসহ বৃদ্ধরাও আগুনে দগ্ধ হচ্ছে৷ গুরুত্ব দগ্ধ চারজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে চিকিৎসা করোনা হলে আরও তাড়াতাড়ি সুস্থ করা সম্ভব।