যুদ্ধের জন্য পাকিস্তানকে প্রস্তুত করছে চীন-তুরস্ক
পাকিস্তানের যুদ্ধ সক্ষমতা সুসংহত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চীন ও তুরস্ক। সাংহাইতে পাকিস্তানের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির দ্বিতীয় ফ্রিগেট প্রস্তুত করেছে চীন। অন্যদিকে, ইস্তাম্বুলের নেভাল শিপইয়ার্ডে পাকিস্তানের জন্য নির্মীয়মান মিলজেম শ্রেণির তৃতীয় করভেটের ‘ওয়েল্ডিং সেরিমনি’ করেছে তুরস্ক।
পাকিস্তান নৌবাহিনীকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইকনোমিক টাইমস’-এর খবরে বলা হয়, এ ফ্রিগেট ও করভেট পাকিস্তানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দৃঢ় করবে এবং শত্রুদের প্রতিরোধ করার কাজ সুসংহত হবে।
ভারতের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সঙ্ঘাতকে সামনে রেখে চীন ও তুরস্ক মিলে পাকিস্তানকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করছে বলে ধারণা করেছেন বিশ্লেষকরা। খবরে বলা হয়, সাংহাইয়ের হাডং-ঝংহু শিপইয়ার্ডে সম্পন্ন হয়েছে টাইপ ০৫৪ এ/পি শ্রেণির দ্বিতীয় ফ্রিগেট তৈরির কাজ।
পাকিস্তানের জন্য এ-রকম চারটি ফ্রিগেট বানাবে চীন। প্রথমটি গত বছরের আগস্টে উদ্বোধন করা হয়। এদিকে, ইস্তাম্বুলে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং দেশটিতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মাদ সাইরাস সাজ্জাদ কাজী যৌথভাবে মিলজেম শ্রেণির তৃতীয় করভেটের ‘ওয়েল্ডিং সেরিমনি’ করেছেন।
২০১৮ সালে তুরস্কের রাষ্ট্র মালিকানাধীন ডিফেন্স কন্ট্রাক্টর ‘আসফাত ইঙ্ক’-এর সঙ্গে চারটি মিলজেম শ্রেণির করভেট নিয়ে পাকিস্তান নৌবাহিনীর চুক্তি হয়। প্রযুক্তি হস্তান্তরের এ চুক্তি অনুযায়ী দুটি করভেট নির্মাণ হবে ইস্তাম্বুল নেভাল শিপইয়ার্ডে এবং অন্য দুটি হবে করাচি শিপইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসে।
চীনের তৈরি টাইপ-০৫৪ এ/পি ক্লাস ফ্রিগেটের মাধ্যমে পাকিস্তানের নৌবাহিনীর ক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সামরিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, পাকিস্তানের জন্য চীনের এত আয়োজন মূলত চীরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে ঠেকাতে।
এই রণতরীতে সর্বশেষ অত্যাধুনিক অস্ত্র সংযোজন করা হয়েছে। দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে ভূমিতে আক্রমণ উপযোগী এই জাহাজে রয়েছে এন্টি-এয়ার মিসাইল। এর যুদ্ধ পরিচালন ব্যবস্থা ও সেন্সর পাকিস্তান নৌবাহিনীকে ব্যাপক সুবিধা দেবে।
২০১৭ সালে ইসলামাবাদ চায়না শিপবিল্ডিং ট্রেডিং কোম্পানির (সিএসটিসি) সাথে দুটি টাইপ-০৫৪ এ/পি রণতরী নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করে। পরের বছর আরও দুটি রণতরী নির্মাণের চুক্তি করে পাকিস্তান।
তাছাড়া, বেইজিংয়ের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা খাতের অন্যতম অংশীদার ইসলামাবাদ ২০১৬ সালে ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিতে আটটি চীনা ইয়ান শ্রেণির টাইপ-০৪১ ডিজেল সাবমেরিন ক্রয়ের জন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে, যা ২০২৮ সাল নাগাদ পাকিস্তানের হাতে পৌঁছাবে।
পাকিস্তানকে যে করভেট দিচ্ছে তুরস্ক, মিলজেম নামের সেই রণতরীর দৈর্ঘ্য ৯৯ মিটার। ২৪ হাজার টন ওজনের এ যুদ্ধ জাহাজের গতি ২৯ নটিক্যাল মাইল। ভারী গোলাবর্ষণে সক্ষম এই যুদ্ধজাহাজ যে কোনো প্রতিপক্ষের জন্য ত্রাস হিসেবে বিবেচিত হয়। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র হানার ক্ষমতা।
ভূমি থেকে ভূমিতে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে প্রতিপক্ষকে সহজেই নাস্তানাবুদ করতে পারে এই রণতরী। স্টেলথ করভেন গোত্রের মিলজেম প্রতিপক্ষের সাবমেরিনকে ফাঁকি দিয়ে গোপনে এবং অতর্কিতে হামলা চালাতে পারে। বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণ চালাতেও সক্ষম। নৌঘাঁটিতে স্থায়ীভাবে থাকার পাশাপাশি টহলদারিও চালাতে পারবে এই রণতরী।