অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর কীভাবে গণমাধ্যমে যায়, তার জন্য তদন্ত কমিটি !!
অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর কীভাবে গণমাধ্যমে যায়, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে কারা অধিদপ্তর। বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা ও সমালোচনা চলছে।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন গত ৩১ জানুয়ারি ‘কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ গাজীপুরের অফিসকক্ষে বন্দী তুষার আহমেদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ সংক্রান্ত হস্তগত হওয়ায় বিষয়ে তদন্ত কমিটি’ গঠন করেন।
তিনি কেন এ ধরনের তদন্ত কমিটি গঠন করলেন, তা জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক আবরার হোসেন বলেন, ‘কারাগারে দেখা-সাক্ষাৎ করিয়েছে এটা অনিয়ম হয়েছে কিন্তু ভিডিও ফুটেজ যাওয়া তো গুরুতর অপরাধ। এটা কীভাবে যে গেল তা খুঁজে বের করা জরুরি। আমরা এটা খুঁজে বের করব এবং অ্যাকশনে যাব।’
জনগণের তো জানার অধিকার আছে কারাগারের ভেতরে কী ঘটছে? জানতে চাইলে আবরার হোসেন বলেন, ‘আমার কারাগারে কী ঘটছে সেটা কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভেতর থেকে সাংবাদিকদের দিয়ে দেবে? কারাগারের ভেতরে ক্যামেরায় কী হচ্ছে, তা যদি কড়াকড়ি করতেই না পারি তাহলে সাংবাদিকেরা গিয়ে কারাগারের ভেতরেই থাকেন।’
যশোরের কারা উপমহাপরিদর্শক মো. ছগির মিয়াকে সভাপতি করে তিন সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার জ্যেষ্ঠ জেল সুপার (চলতি দায়িত্ব) মো. গিয়াস উদ্দিন ও ফরিদপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার আল মাসুম।
তদন্ত কমিটি গঠনসংক্রান্ত এ চিঠিতে বলা হয়েছে, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ গাজীপুরের অফিসকক্ষে হাজতি বন্দী তুষার আহমদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজ চ্যানেল ২৪ ও পরবর্তীতে বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ এবং প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কারা অভ্যন্তরের দাপ্তরিক নথিপত্র কীভাবে বা কার মাধ্যমে হস্তগত হয়েছে, তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
কারা অধিদপ্তর কমিটিকে এই ঘটনার সম্ভাব্যতা যাচাই এবং কারাবিধির আলোকে অপরাধ নির্ণয়, দায়ী ব্যক্তি চিহ্নিত (যদি থাকে) ও দায়ী ব্যক্তিদের অপরাধ সম্পর্কে কারাবিধি অনুযায়ী মতামত ও সুপারিশ এবং ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে মতামত দিতে বলা হয়েছে। সূত্রঃ প্রথম আলো।
এখানে উল্লেখ্য যে, তুষার আহমদকে বিধি লঙ্ঘন করে এক নারীর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ দেওয়ায় কাশিমপুর-১ কারাগারের তখনকার জ্যেষ্ঠ জেল সুপার রত্না রায়, জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধা ও ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলায়েনসহ ১১ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও সাতজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এমন আজগুবি ধরনের তদন্ত কমিটি গঠন করার ঘটনায় কারা অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মচারী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এমন সিদ্ধান্তে বিরক্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এ ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করে বলেন, এটা সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অধিকার এবং জনগণের তথ্য জানার অধিকারের লঙ্ঘন।। কারা অধিদপ্তর এ ধরনের তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে অনিয়মকে উসকে দিয়েছে। অপরাধ-অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করার চেয়ে তথ্য সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করাই যে তাদের মূল উদ্দেশ্য, তা পরিষ্কার হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ
- খোলা জায়গায় বন্দি শিবিরে’ মিয়ানমারের আইনপ্রণেতারা
- আমাদের নির্মূল করাই তাদের লক্ষ্য: ধর্ষণের শিকার উইঘুর নারী