হারারেতে হেসে খেলে জিতল বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল হারারেতে হেসেখেলে জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে। জিম্বাবুয়ের হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে আজ (রবিবার) পঞ্চম ও শেষদিন বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যে টান টান উত্তেজনায় ঠাসা টেস্ট ম্যাচ উপভোগ করেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
আজ জিম্বাবুয়েকে জয়ের জন্য করতে হত ৩৩৭ রান। পক্ষান্তরে টাইগারদের দরকার ছিল ৭ উইকেট। পঞ্চম দিন ব্যাট হাতে শুরুটা ভালোই করেছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপ বাড়তে থাকে তাদের। আর বল হাতে সেই সুযোগ লুফে নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদ।
মিরাজ এবং তাসকিনের বোলিং তোপের সামনে বালির বাধের মত গুঁড়িয়ে গেছে স্বাগতিকদের সব প্রতিরোধ। এর ফলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে ২২০ রানের বিশাল ব্যবধানে হেসে খেলে জিতল বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে এটি টাইগারদের ৮ম জয়। এত দিন ধরে টেস্টে দুই দলের জয়ের পাল্লা সমান ছিল। ২০০১-২০২০ সাল পর্যন্ত দুদল ৯ সিরিজে ১৭ ম্যাচে মুখোমুখি হয়। যেখানে বাংলাদেশ ৭টি ও জিম্বাবুয়ে ৭টি ম্যাচ জিতেছে। আর বাকি ৩ ম্যাচ ড্র হয়েছে।
আজকের এ সুবিশাল জয়ের ফলে এগিয়ে গেল বাংলাদেশের মুমিনুল বাহিনী। এদিকে পঞ্চম দিনের শুরুতে উইকেট শিকার করতে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে টাইগার বোলারদের। তবে মিরাজের স্পিন জাদুতে ভাঙে জিম্বাবুয়ের প্রতিরোধ। তার স্পিন ঘূর্নিতে পানি পানের বিরতির পর প্রথম বলেই সাদমান ইসলামের হাতে ক্যাচ দেন মায়ার্স।
মিরাজের বলে আউট হবার আগে জিম্বাবুইয়ের এ ব্যাটসম্যান ৮৮ বলে করেন ২৬ রান। এখানেই থামেননি মিরাজ। দুই বল পর ফের মাতেন উইকেট উদযাপনে। ক্রিজে আসা নতুন ব্যাটসম্যান টিমাইসেন মারুমাকে রানের খাতা খোলার আগেই এলবিডাব্লিউ করে সাজঘরে পাঠায় মিরাজ।
জিম্বাবুয়ে দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে ও তারা আরো বিপদে পড়ে তাসিকন আহমেদের ছোবলে। এই পেসারের বলে শূন্য রানে আউট হন রয় কাইয়া। এতে স্বাগতিকরা হারায় ষষ্ঠ উইকেট।
সব চেয়ে মজার বিষয় হল, তাসকিন এক ওভার পর ফিরে এসে বোল্ড করেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান চাকাবাকে। ৭ উইকেট খুইয়ে বেশ চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। এরপর আর কোন ব্যাটসম্যান ক্রিজে টিকতে পারেনি। বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন ৪ উইকেট শিকার করেন। আর মিরাজও ৪ উইকেট নেন।
তাছাড়া গতকাল (শনিবার) চতুর্থ দিনের গল্পটা ছিল বাংলাদেশের সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্তর। দুজনেই পৌঁছেন সেঞ্চুরিতে। সাদমান ১৯৬ বলে ১১৫ ও শান্ত ১১৮ বলে ১১৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন। টেস্ট ক্যারিয়ারে সাদমানের এটি প্রথম শতক। আর শান্ত তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছেন দ্বিতীয়বার।
বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল তাদের দুজনের সেঞ্চুরি পূরণ হওয়ার পরপরই ইনিংস ঘোষণা করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ২৮৪ রান। আর স্বাগতিকদের সামনে জয়ের জন্য ৪৭৭ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় সফরকারীরা।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর লিটন দাস ও মাহমুদউল্লার ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। লিটন সেঞ্চুরি থেকে ৫ রান দূরে থাকতে আউট হলেও সেঞ্চুরি করার পর সেটিকে দেড়শ রানে রূপ দেন মাহমুদউল্লাহ। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন বোলার থেকে ব্যাটসম্যান বনে যাওয়া তাসকিন আহমেদ। টেস্ট ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ৭৫ রানের ইনিংস এসেছে তার ব্যাট থেকে। রিয়াদের ১৫০ রানও তার টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ। তার আগে মুমিনুল হক করেন ৭০ রান। সাকিব আউট হন মাত্র ৩ রানে।
জিম্বাবুয়ের হয়ে ৪টি উইকেট নেন ব্লেসিং মুজারাবানি। দুটি করে উইকেট পান ডোনাল্ড ত্রিরিপানো ও ভিক্টর নিয়াচু। জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় ২৭৬ রানে। বাংলাদেশের হয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ ৫টি ও সাকিব আল হাসান ৪টি উইকেট পান।