বার্সেলোনা ছেড়ে দিলেন ফুটবলের জাদুকর মেসি
বার্সেলোনা ছেড়ে দিলেন মেসি, অন্যভাবে বললে এটাই দাঁড়াই ক্লাবই তাকে রাখতে পারেনি মেসি। সকল কল্পনা ও আলোচনার আবসান ঘটিয়ে অবশেষে বার্সেলোনা ছাড়লেন আর্জেন্টাইন ফুটবলের জাদুকর লিওনেল মেসি।
এরফলে বার্সেলোনা ক্লাবটির সঙ্গে দীর্ঘ ২১ বছরের সম্পর্কের আবসান বা বিচ্ছেদ ঘটল মেসির। ২০০০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বার্সেলোনায় পা রেখেছিলেন মেসি। বার্সেলোনার প্রাণভোমরা হয়েছিলেন টানা ২১ বছর।
লিওনেল মেসি ৫০ শতাংশ বেতন কমিয়ে খেলার ইচ্ছা জানিয়েও প্রিয় ক্লাবে আর থাকা হলো না তার। নতুন চুক্তিতে সই আর করা হলো না। এখন থেকে মেসি বার্সার সাবেক অধিনায়ক, সাবেক তারকা।
ক্লাব বার্সেলোনা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মেসি বার্সেলোনায় থাকছেন না। ক্লাব ও খেলোয়াড় নতুন চুক্তি করে সমঝোতায় পৌঁছেছিল। কিন্তু আর্থিক ও কাঠামোগত বাঁধায় নতুন চুক্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। দুই পক্ষের চুক্তিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে লা লিগার কঠোর নিয়ম।
বিখ্যাত ক্লাব বার্সেলোনা আরো জানায়, ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্ত একসঙ্গে থাকার যে ইচ্ছে ছিল তা পূরণ না হওয়ায় দুই পক্ষেরই আফসোস হচ্ছে। বার্সেলোনা হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে এ ফুটবলারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছে ক্লাবের প্রতি তার অবদান ও সাফল্যর জন্য এবং তার পরবর্তী ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের জন্য শুভকামনা জানাচ্ছে।’
২০২১-২২ মৌসুমে আর একসঙ্গে থাকা হচ্ছে না মেসি ও বার্সেলোনার। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে এক আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ক্লাব বার্সেলোনা।
মেসি গত ৩০ জুনই ফ্রি এজেন্ট হয়ে যান। এখন কোনো ট্রান্সফার ফি ছাড়াই যেকোনো ক্লাবে যোগ দিতে পারবেন মেসি। বার্সার ছাড়ার পর পরই মেসিকে নিতে মুখিয়ে থাকার কথা ইউরোপের অনেক দলের। কোন ক্লাবে মেসি খুঁজে নেবেন নিজের ঠিকানা?
উল্লেখ্য, গত বছরই মেসির বার্সা ছাড়ার ঘোষণার পর তাকে পাওয়ার দৌড়ে সব চেয়ে বেশি এগিয়েছিল ৩ ক্লাব – ফ্রেঞ্চ ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি), ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান ও ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি। আর এই তিন ক্লাবের মধ্যে পিএসজিকেই বেছে নেবেন মেসি, জানিয়েছিলেন তার বাবা জর্জ মেসি। এবারও পরিস্থিতি তেমন একটা পাল্টায়নি।
স্পেনের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম মার্কার মতে, ইংল্যান্ড, ইতালি বা ফ্রান্সের ৪টি ক্লাবের মধ্যে যেকোনো একটিতে যেতে পারেন মেসি। এ তালিকায় সবার আগে রয়েছে ফ্রান্সের ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর (পিএসজি) নাম।
মেসির সঙ্গে গত জুনে বার্সেলোনার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকেই আর্জেন্টাইন তারকাকে পেতে নিয়মিতই প্রস্তাব দিয়ে এসেছে ক্লাবটি।
মেসিকে দলে ভেড়াতে পিএসজির ডিরেক্টর লিওনার্দো যোগাযোগ করেছিলেন মেসির বাবার সঙ্গেহ। যদিও সফল হননি লিওনার্দো। মেসিরও ফরাসি জায়ান্টদের দলে যাওয়ার আগ্রহ রয়েছে। কারণ সেখানে গেলেই সতীর্থ হিসেবে পাবেন বার্সেলোনার সাবেক তারকা ও বন্ধু ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার জুনিয়র এবং স্বদেশি তারকা ফরোয়ার্ড অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াকে।
আর এদিকে আবার বাতাসে গুঞ্জন ভাসছে, ফরাসি তরুণ কিলিয়ান এমবাপ্পে পিএসজি ছাড়ছেন। তাই মেসির মতো বড় তারকাকে দলে ভেড়ানোর ইচ্ছাটা আরো প্রবল হতে পারে ক্লাবটির। পিএসজি চেয়ারম্যান নাসের আল খেলাইফি বরাবরই মেসিভক্ত। পিএসজির পরই ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির নাম মুখে আসছে মেসিভক্তদের। কারণ সেখানে আছেন মেসির সাবেক গুরু পেপ গার্দিওয়ালা।
গত জুনে ৭০০ মিলিয়ন ইউরো হলেও মেসিকে চায় বলে জানিয়েছিল ক্লাবটি। এছাড়া গত বছরই মেসির বাবা জানিয়েছিলেন, ম্যানচেস্টার সিটি ছাড়া অন্য কোনো ক্লাবে খেলার ইচ্ছাই নেই তার ছেলের।
ফ্রান্সের অন্যতম সংবাদমাধ্যম লা ইকুইপের সে সময়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ম্যান সিটিকে বেছে নিয়েছেন মেসি। পেপ গার্দিওলার ভক্ত তিনি। গার্দিওলার অধীনেই কাজ করতে আগ্রহী। তাই সেখানে সে যেতে পারে।
এরপরও ইংল্যান্ডের আরেক ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ইতালির ক্লাব জুভেন্টাসে যাওয়ার প্রসঙ্গ উঠছে। ইউরোপীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ, জুভেন্টাসে চির প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে দেখা যেতে পারে মেসিকে। এ দুই ক্লাব মেসিকে পেতে এখনও পর্যন্ত উঠে পড়ে না লাগেনি। তবুও দুই ক্লাবে মেসির যাওয়া সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সূত্র : মার্কা