ঢাকায় মোদী, আড়ং-এ দাড়ি আর মাদ্রাসায় মারধর নিয়ে প্রশ্ন !!
চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে দুটি বিষয় বেশ আলোচনার সৃষ্টি করেছে। এর একটি হচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন বাংলাদেশ সফর নিয়ে বিতর্ক।
তবে আজ শুরু করছি বৈষম্যমূলক আচরণের একটি অভিযোগ দিয়ে, কিন্তু অভিযোগটি আমাদের বিরুদ্ধে নয়। প্রথমটি জানাচ্ছি নওগাঁর সুলতান মাহমুদ সরকারের চিঠি থেকে: ”বাংলাদেশে আড়ং একটি নামী কোম্পানি। এখানে একজন যোগ্য চাকুরী প্রার্থীকে শুধুমাত্র দাড়ি রাখার জন্য চাকুরী দেওয়া হয় নাই। এটা কি ঠিক হয়েছে? দাড়ি রাখার বিষয়টি সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে লক্ষ করা যায়, তাহলে এই আচরণ কি ধর্মীয় উস্কানি সৃষ্টির জন্য করা হয়েছে?”
আড়ং-এর আচরণের কারণ আমার জানা নেই মি. সরকার, তবে এটুকু জানি তারা বিষয়টি নিয়ে বিব্রত এবং ঘটনার পরের দিনই দুঃখ প্রকাশ করেছে। কোন ক্ষেত্রেই কারও বিরুদ্ধে তার ধর্ম, জাতি, গায়ের রঙ বা অন্য কোন কিছু কারণে বৈষম্য করা উচিত না।
বে দাড়ি তো শুধু মুসলিমরাই রাখেন না; ক্রিশ্চিয়ান, ইহুদী, হিন্দু, শিখ-সহ অনেক ধর্মের অনুসারী দাড়ি রাখেন। তাহলে এখানে আপত্তি কি শুধু মুসলিমদের বেলাতেই? সে প্রশ্নই করেছেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে মেনহাজুল ইসলাম তারেক:
”যদি এমন দাড়ি দ্বারা বিচার করা হয়, তাহলে ভারতের নরেন্দ্র মোদী বা বিশ্বখ্যাত ফুটবলার লিওনেল মেসিসহ অন্যদের ক্ষেত্রে কী বিবেচনা করবেন? এ থেকে কি ধরে নিবো- বাঙালী, তুমি লালন গীতি গাইতে পারবে, কিন্তু লালনের মত দাড়ি রাখতে পারবে না। তুমি ইয়া লম্বা লম্বা দাড়িওয়ালা রবি ঠাকুরের লেখাকে দেশের জাতীয় সঙ্গীত বলে গাইতে পারবে, কিন্তু তার মত দাড়ি রাখতে পারবে না। তুমি দাড়িওয়ালা নরেন্দ্র মোদীকে দেশে আমন্ত্রণ করতে পারবে, কিন্তু তার মত দাড়ি রাখতে পারবে না। তুমি লিওনেল মেসির ভক্ত হতে পারবে, কিন্তু তার মত দাড়ি রাখতে পারবে না । কারণ তুমি…” কারণ তুমি … বলতে আপনি কি মুসলিম পরিচয়ের দিকে ইঙ্গিত করছেন? হয় তো তাই করছেন।
কিন্তু সেই উপসংহার কি আমরা শুধুমাত্র একটি ঘটনা থেকে টানতে পারি? আমার মনে হয় না আমরা সেটা পারি মি, ইসলাম, কারণ মানুষ যেমন ধর্মীয় কারণ ছাড়াও দাড়ি রাখে, তেমনি কোন প্রতিষ্ঠান ভিন্ন কারণে দাড়ি রাখা নিরুৎসাহিত করতে পারে। বিশ্বের সব বড় ধর্মেই দাড়ি রাখার প্রচলন আছে, সেজন্য কোন প্রতিষ্ঠানে যদি দাড়ির বিরুদ্ধে কোন নিয়ম থাকে, সেটাকে ঢালাওভাবে ইসলাম-বিরোধী বলে আখ্যায়িত করা ঠিক হবে বলে আমার মনে হয় না।
নরেন্দ্র মোদীর দাড়ি প্রসঙ্গ যখন টানা হয়েছে, তখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের কথায় আসা যাক। এ কথা সত্য যে মি. মোদী এখন একটি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। সে বিষয়ে লিখেছেন খুলনার দাকোপ থেকে মুকুল সরদার:
”তিস্তা পানি চুক্তি, ভারতে গরুর মাংস খাওয়ার কারণে মুসলমানদের উপর নির্যাতন, সীমান্ত হত্যা-সহ বেশ কিছু ইস্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করছে কয়েকটি সংগঠন। তাঁর এই সফরকে ঘিরে বাংলাদেশে যে মোদী বিরোধিতা তৈরি হয়েছে, এটি থেকে ভারত কি বিশেষ কোনো বার্তা পাবে? বা দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেমন কোনো প্রভাব পড়তে পারে কি?”
সেরকম প্রভাব হয়তো পড়বে না মি. সরদার, যেহেতু বাংলাদেশ সরকার কোনওভাবেই ভারতের সাথে তাদের সম্পর্ক শীতল হতে দেবে না। তবে নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে বিতর্ক এখন আর দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে সীমাবদ্ধ নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেকেই ভারতকে এখন পূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেখছে না।
অনেক মানবাধিকার সংস্থা এখন জোরেশোরেই ভারতকে নির্বাচিত স্বৈরাচার আখ্যা দেয়া শুরু করেছে (বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন)। বাংলাদেশে অনেকে আছেন যারা ভারতের মঙ্গল কামনা করেন, কিন্তু নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে অস্বস্তিতে থাকেন।
সেরকম একটি মনোভাব প্রকাশ করেন লিখেছেন ঢাকার লক্ষ্মীবাজার থেকে জহিন মুমতাহিনাহ: ”ছোটবেলা যখন প্রাচীন কাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ইতিহাস পড়েছি, তখন মনে হয়েছে অবিভক্ত ভারত একসময় আমাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এবং এখনও নিকটতম বন্ধু প্রতিম প্রতিবেশী দেশ। ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছিল। সে দিক থেকে ভারতের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আছে এবং থাকবে। ”কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে নরেন্দ্র মোদী একজন স্বার্থান্বেষী সাম্প্রদায়িক। মোদীর দল প্রকাশ্যে মুসলিমদের সাথে বৈষম্য করছে। তার মতো একজন সাম্প্রদায়িক লোককে কিভাবে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে নিমন্ত্রণ জানান হয়, তা আমার মতো অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে।”
সে প্রশ্ন অনেকেই করেছেন মিস মুমতাহিনাহ। কিন্তু মি. মোদী ভারতের সরকার প্রধান, সে ব্যাপারে বাংলাদেশের করার কিছু নেই। অন্যদিকে, মুজিববর্ষ পালনে দিল্লির সর্বোচ্চ পর্যায়ের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, তাই প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আমন্ত্রণ জানাতেই হবে। হয়তো আওয়ামী লীগ সরকার আরেকটি দিক বিবেচনা করছে। মি. মোদী যখন ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসেন, তখন বাংলাদেশে অনেকে ভেবেছিলেন তিনি শেখ হাসিনার প্রতি ভারতের সমর্থন কমিয়ে আনবেন, কিন্তু সেটা হয়নি। কাজেই, এখানে কৃতজ্ঞতাও কিছুটা কাজ করতে পারে।
তবে বিষয়টি ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন সম্পদ কুমার পোদ্দার, যিনি বগুড়ার শেরপুরের বাসিন্দা: ”আমার চরম শত্রুও যদি আমার বাড়িতে বেড়াতে আসে, আমি তাকে অতিথি হিসেবে গ্রহণ করবো। ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের সাথে আমাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন থাকতেই পারে। এটা আলোচনা ছাড়া সমাধানের অন্য কোনো সহজ উপায় তো দেখি না। তাদের সফরের বিরুদ্ধে আন্দোলনের খবর তো আর গোপন থাকবে না। এরকম হলে তো তাদের রাষ্ট্রকেই অপমান করা হবে। কারণ তারা তো ওইসব রাষ্ট্রেরই প্রতিনিধিত্ব করছে। তারা যে আসছে এটাই বড় কথা। অতিথিকে অতিথির মতোই দেখতে হবে, শত্রুর মতো অপমান করে নয়।”
বিদেশী সরকার প্রধানের সফরের সময় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ নতুন কোন ঘটনা নয় মি. পোদ্দার। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে এরকম হয়েছে। কয়েক বছর আগে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ব্রিটেন সফরে আসেন, তখন লন্ডনে বড় মাপের বিক্ষোভ হয়েছিল, তাকে ব্যঙ্গ করে বেলুন ওড়ানো হয়েছিল। তাতে কিন্তু আমেরিকা রাষ্ট্র অপমানিত হয়নি।
ব্রিটিশ সরকার মি. ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানালেও বিক্ষোভ আটকানোর চেষ্টা করেনি, কারণ প্রতিবাদ জানানোর অধিকার পাবলিকের আছে। মি. ট্রাম্পের মতই, মি. মোদী একজন বিতর্কিত নেতা এবং তার সফরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হওয়াটা আশ্চর্যের কিছু না, এবং তাতে ভারত রাষ্ট্রের অপমানিত হওয়ার কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না।
এবারে ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। সম্প্রতি হাটহাজারির মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতনের যে ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে, তা নিয়ে লিখেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাসুম বিল্লাহ: ”হাটহাজারি মাদ্রাসার শিক্ষকের নির্মম নির্যাতন শুধু একটি ঘটনার প্রতিচ্ছবি নয়। প্রত্যেকটি মাদ্রাসার মধ্যে এমন নির্যাতন ছাত্ররা মুখ বুঝে সহ্য করে। তার উপর বাবা-মাও চায় তাদের বাচ্চারা যদি দুষ্টামি করে তাহলে শিক্ষক যেন শাসন করেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষকেরা শাসনের বদলে নিজের আপেক্ষিক রাগ তাদের ছাত্রদের উপর প্রয়োগ করে থাকেন। এটা কোন ভাবেই শাসন হতে পারে না। পাঁচ বছরের এমন একটি কচি বাচ্চাকে যদি এমন ভাবে প্রহার করা হয়, তা হলে এক সময় বাচ্চাটা হয়তো পড়াশুনাও ছেড়ে দিতে পারে। আগে শিক্ষকদের বোঝা উচিত কোনটা শাসন আর কোনটা নির্যাতন।”
বিশ্বের অনেক দেশেই এক সময় শাসনের নামে শিশু-কিশোরদের এভাবে নির্যাতন করা হত মি. বিল্লাহ। এই নির্যাতন কিন্তু শিক্ষকদের শুভবুদ্ধির উদয়ের কারণে থামেনি। স্কুল-কলেজে শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন করার কারণেই পশ্চিমা বিশ্বে এরকম নির্যাতন বন্ধ হয়েছে। এমনকি অভিভাবকরাও পারেন না বাচ্চাদের মারধর করতে। শাসন আর নির্যাতনের পার্থক্যটা অনেক সময় আইন করে বুঝিয়ে দেয়ার প্রয়োজন হয়।
বিষয়টিকে একটু ঘুরিয়ে দেখছেন ঢাকার গেণ্ডারিয়া থেকে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান: ”এমাসের ১১ তারিখে বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় প্রকাশিত “কওমি মাদ্রাসাগুলোয় নির্যাতনের ‘বেশিরভাগই ধামাচাপা পড়ে যায়’ বলছেন অধিকার কর্মী” শীর্ষক প্রতিবেদনটি পড়লাম। আমার মতে, শুধু মাদ্রাসা বা ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র নয়, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা যে জায়গাই হোক, এটা উদ্বেগজনক ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটা চরম ঘৃণিত অপরাধও বটে। ”অপরাধীকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা শুধু রাষ্ট্র বা সমাজের দায়িত্ব নয়, যেকোন বিবেকবান নাগরিকেরও দায়িত্ব। সেটা মাদ্রাসা হোক বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান হোক। কিন্তু আমি লক্ষ্য করেছি, বিবিসি মাদ্রাসা বা ইসলামী শিক্ষা নিয়ে যেভাবে কোন ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে নেতিবাচক ভাবে প্রচার করে, তা অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে করে না। এটা কী এক ধরণের বৈষম্য নয়?”
আপনার সাথে সবাই একমত হবেন মি. রহমান, যে শিশু নির্যাতন অত্যন্ত ঘৃণ্য একটি অপরাধ। অর্থাৎ একটি নেতিবাচক ঘটনা। সেই ঘটনা নেতিবাচক ভাবেই তুলে ধরা বাঞ্ছনীয়, এখানে ভারসাম্যর কোন জায়গা নেই। যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশু নির্যাতন বা সমাজের যে কোন জায়গায় নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনা আমরা এভাবেই তুলে ধরি। অনেক মাদ্রাসা যেহেতু আবাসিক, তাই ভেতরের অনেক খবর বাইরে আসে না। যখন দু’একটি আসে, তখন সেগুলো ব্যতিক্রমী মনে হয় এবং সেজন্য আরও বেশি গুরুত্ব পায়।
এবার আসি পুরনো একটি বিষয়ে যেটা নতুন করে মাথা চাড়া দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ধীরে ধীরে বাড়ছে, এবং তার সাথে বাড়ছে উদ্বেগ। প্রথমে লিখেছেন সাভার সরকারি কলেজ থেকে মনিরুল হক রনি: ”সাম্প্রতিক সময়ে জনসাধারণের মধ্যে ফেস মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে যেমন শৈথিল্য ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, তেমনি সরকারের পক্ষ থেকেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে এগুলো পরিপালনে বাধ্য করার ক্ষেত্রেও চরম উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদেরকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে।”
একই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে মুশফিকুর রহমান ওলিউল্লাহ: ”সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ, মানুষ আর আগের মত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না । যেসব মানুষ টিকা নিচ্ছে, তাদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে । কিন্তু তারা যদি এখন সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলে তবে তাদের মাধ্যমেও অন্যরা সংক্রামিত হতে পারে। অধিকাংশ মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাকে প্রয়োজন মনে না করে , তাহলে মহামারি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কঠিন হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।”
আপনারা ঠিকই বলেছেন মি. হক এবং মি. ওলিউল্লাহ, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলার কারণে যেমন বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয়, এমনকি তৃতীয় ঢেউ চলছে, তেমনি বাংলাদেশেও নতুন ঢেউ শুরু হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ব্রিটেনে যেমন মাসের পর মাস লকডাউন দিয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য, সভা-সমিতি, খেলা-ধুলা বন্ধ রেখে সংক্রমণের হার কমিয়ে আনা হয়েছে, বাংলাদেশ কি চাইবে বা পারবে সেভাবে গোটা দেশকে অচল করে দিতে? হয়তো সেটা হবে না। তাহলে জনসমক্ষে মাস্ক পরা এবং দুরত্ব বজায় রেখে চলা একেবারে অপরিহার্য হয়ে পড়বে।
চলমান এই মহামারি নিয়ে আরেকটি চিঠি, লিখেছেন খুলনার কপিলমুনি থেকে মোহাম্মদ শিমুল বিল্লাল বাপ্পি: ”এক বছর ধরে স্কুল কলেজ বন্ধ আছে। মহামারির কারণে শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ৩০শে মার্চ সরকার স্কুল কলেজ খোলার ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে নিয়েছে বলে গণমাধ্যমে জেনেছি। কিন্তু বেশ কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যমে জানতে পারছি, করোনা রোগী যেমন বাড়ছে, তেমনি করোনার কারণে মৃত্যুও আগের তুলনায় উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে গেছে। করোনা সংক্রমণ যদি এ ভাবে বাড়তে থাকে তাহলে কী হবে?”
আমি যতদূর জানি মি. বিল্লাল, সরকার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে পারে। কাজেই, সংক্রমণের হার যদি সত্যিই উদ্বেগজনক হয়, তাহলে তারা সম্ভবত স্কুল খোলা আবারও পিছিয়ে দিতে পারে। কিন্তু সবই নির্ভর করবে সরকার কীভাবে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তার ওপর। টিকাদান কর্মসূচী আরও জোরদার করা ছাড়া আর কোন রাস্তা আছে বলে তো আমার মনে হয় না।
কিছুক্ষণ আগে আড়ংয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্য নিয়ে কথা হচ্ছিল। এবারে আমাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ, তবে সেটা চাকুরী নিয়ে না, প্রীতিভাজনেষু নিয়ে। লিখেছেন লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে মোহাম্মদ ফরহাদ রাজু: ”গত সপ্তাহের প্রীতিভাজনেষুতে শুনতে পেলাম শ্রোতাদের নিয়ে ফোন ইন-এর একটা ব্যবস্থা করবে। প্রীতিভাজনেষুতে নারীর সংখ্যা কম। তাহলে কি পুরুষরা শ্রোতা নন? বিবিসি বাংলা এটা কোন ধরনের বৈষম্য করছে? শ্রোতা তো শ্রোতাই, নারী কিংবা পুরুষ নয়।”
শ্রোতা অবশ্যই শ্রোতা মি. ফরহাদ এবং আমরা নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য করতে পারি না। তবে বিবিসিতে আমাদের একটি লক্ষ্য আছে, অনুষ্ঠানে যত জনের কণ্ঠ স্থান পাবে, তাদের মধ্যে যাতে ভারসাম্য থাকে, অর্থাৎ ৫০ ভাগ পুরুষ, ৫০ ভাগ নারী। আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন, প্রীতিভাজনেষুতে যত চিঠি পড়া হয়, তার ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ লেখকই পুরুষ। আমরা সেটা মেনে নিয়েছি, যদিও আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এখানে নারী অংশগ্রহণ বাড়ানো। কিন্তু যখন নিজ কণ্ঠে প্রশ্ন বা মন্তব্য নেয়ার কথা ভাবি, তখন অবশ্যই নারী-পুরুষের সমান প্রতিনিধি প্রয়োজন। এটা বৈষম্য না, এটা ভারসাম্য।
আমাদের একটি অনুষ্ঠান শুনে হতাশ হয়েছেন জানিয়ে লিখেছেন সৌদি আরবের মদিনা শরীফ থেকে জসিম উদ্দিন: ”এমাসের ১৪ তারিখের বিবিসি প্রবাহতে করোনা এবং ক্রিকেট, এই দুটি বিষয় নিয়ে যেন পুরো অনুষ্ঠানটা। তেমন কোন কিছুই পেলাম না নতুন। যেন আজকের দিনটা সময় কাটিয়ে দেওয়ার মতো। এমন আরও অনেক সময় ঘটে। তাই বলবো বিশ্বের অন্যান্য বিভিন্ন দেশের উপর বানানো ইংরেজি প্রোগ্রামগুলো বাংলা করে শোনালে শ্রোতারা আরও উপকৃত হতো।”
অনুষ্ঠান শুনে সন্তুষ্ট হননি জেনে দুঃখিত মি. জসিম উদ্দিন। আপনার প্রস্তাব আমরা অবশ্যই মাথায় রাখবো। এবারে আমাদের একটি ত্রুটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন ঢাকার ধানমন্ডি থেকে শামীম উদ্দিন শ্যামল: ”শ্রীলঙ্কায় মুখ ঢাকা বা বোরকা নিষিদ্ধ করা প্রতিবেদনটি পড়ছিলাম। প্রতিবেদনের এক জায়গায় শ্রীলঙ্কাকে সংখ্যালঘু বৌদ্ধ দেশ বলা হয়েছে। আশ্চর্য হলাম। আমার জানা মতে শ্রীলঙ্কা সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ দেশ। নিশ্চিত হওয়ার জন্য উইকিপিডিয়াতে সার্চ করলাম। সেখানেও লেখা আছে শ্রীলঙ্কাতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ৭০.২ শতাংশ। তাহলে কি এই প্রতিবেদনে সংখ্যালঘু শব্দটি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়নি? ভুল হলেও এই শব্দটি এই প্রতিবেদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।” অবশ্যই আমাদের ভুল হয়েছে মি. শামীম উদ্দিন। বৌদ্ধরা শ্রীলঙ্কায় বরাবরই সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেখানে আমরা কীভাবে সংখ্যালঘু শব্দটি ব্যবহার করলাম, তা ভেবে পাচ্ছি না। ভুলের জন্য আমরা অত্যন্ত দুঃখিত এবং লজ্জিত।
আবার ফিরছি চলতি ঘটনায়। শাসনের ব্যর্থতা আর নির্যাতনের নির্মমতা, এ দু’টিই সম্প্রতি দেখা গেছে মিয়ানমারে। সে বিষয়ে লিখেছেন ঝিনাইদহ থেকে কাজী সাঈদ: ”মিয়ানমার থেকে ভারতে পালিয়ে আসা পুলিশ সদস্যদের মুখে মিয়ানমারের ভেতরে কী ঘটছে তার একটা চিত্র বেশ পরিষ্কার হয়ে উঠেছে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে। কিন্তু এই প্রতিবেদনটি যতক্ষণ পড়েছি, সারাক্ষণ সমান্তরাল ভাবে আমার রোহিঙ্গা নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্রটাই চোখের সামনে ভেসে উঠেছে।
”শান্তিতে নোবেল পাওয়া অং সান সুচি যদি আগেই মুখ খুলতেন, কী ক্ষতি হত তার? ক্ষমতা চলে যেত? তাতে অন্তত তার সম্মানটুকু বেঁচে থাকত। এখন তো তিনি ক্ষমতা-সম্মান সবই হারালেন। কথায় আছে, “নগর পুড়লে দেবালয় রক্ষা পায়না।” ছোট্ট ধরণীর বিস্তীর্ণ অংশ অশান্তিতে রেখে কিছু অংশ শান্তিতে থাকবে, এমনটাই ধারণা করেন বিশ্ব মোড়লরা। কিন্তু বাস্তবে কি তা ঘটে?”
আপনি অনেকের মনের কথা প্রকাশ করেছেন মি. সাঈদ। পশ্চিমা বিশ্বে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় একটি কথা শোনা যায়, যেখানে সুবিচার নেই সেখানে শান্তিও থাকবে না। অং সান সু চি-র নেতৃত্বে মিয়ানমার গণতন্ত্র এবং শান্তির দিকে এগুচ্ছিলো ঠিকই। কিন্তু রোহিঙ্গাদের প্রতি চরম অবিচার করে সামরিক বাহিনী নিজেদের অগণতান্ত্রিক অন্তরটা প্রকাশ করে দেয়ার পরও, মিস সু চি এবং তার দল জেনারেলদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। এখন সেই সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে তাদের।
সব শেষে, আসন্ন ঝড়ের মৌসুম নিয়ে লিখেছেন পটুয়াখালীর মৌকরন থেকে শাহীন তালুকদার: ”লঞ্চ দুর্ঘটনার পর অনেক গল্প শুনি যেমন ফিটনেস ছিলনা, নকশায় ত্রুটি, মেয়াদ উত্তীর্ণ পুরাতন ইঞ্জিন, তদন্ত হচ্ছে, লাইসেন্স বিহীন চালক, হেলপার দ্বারা চালানো ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো এখনই দেখার সময় কারণ, সামনে আসছে কালবৈশাখী ঝড়। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।” ভাল কথা বলেছেন মি. তালুকদার। বছরের পর বছর কর্তৃপক্ষ একই কথা বলে, কিন্তু ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠিকই হয়। আশা করা যায়, লঞ্চের ফিটনেস, নাবিকদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি দুর্ঘটনার আগেই পরীক্ষা করে দেখা হবে। লিখাটি বিবিসি বাংলা থেকে হুবহু পাঠকদের জন্য দেয়া হলো।