অর্থনীতিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা কতটা পড়বে
বিশ্ব অর্থনীতিতে করোনার ঘা এখনও দগদগে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর কল-কারখানা সব চালু হলেও অর্থনীতির গতি স্বরূপে ফিরতে পারেনি। এরই মাঝে গত কয়েক দিনে বাংলাদেশে বেড়েছে করোনার সংক্রমণ। সেই সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যু হারও। এজন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট সকলে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তার ক্ষতিকর প্রভাব অবশ্যই অর্থনীতিতে পড়বে। ইতিমধ্যে করোনার ফলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক ধারা বইছে। লক্ষাধিক মানুষ বেকার হয়েছে, দারিদ্র্য বেড়েছে, রাজস্ব আয় কমেছে এবং রপ্তানি খাতেও প্রবাহ নিম্নমুখী।
মহামারী করোনার ধাক্কা কাটাতে সরকার ১ লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। দেশের অর্থনীতি এতে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে জানা যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া তথ্যে।
কিছুদিন আগে শীত কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশের করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যাপকভাবে খুলে দেয়া হয়। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানিতেও গতি ফেরে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বর্তমানে দেশের অর্থনীতি এখন গেল কয়েক মাসের চেয়ে বেশি গতিশীল হলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় কমই রয়ে গেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর তথ্য বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের রপ্তানি আয় কমেছে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৪ শতাংশের মতো। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট ২ হাজার ৫৮৬ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১.৪৫ শতাংশ এবং বর্তমান লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩.৬১ শতাংশ কম। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল দুই হাজার ৬২৪ কোটি ডলার।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য এ বছরের জানুয়ারি মাসে গেছেন ৩৪ হাজার ৩১৪ জন শ্রমিক। যা তা আগের মাসের চেয়ে প্রায় ২১ শতাংশ বেশি। এ সময় ঋণের চাহিদাও বেড়েছে। নভেম্বরের চেয়ে ডিসেম্বরে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে ১ দশমিক ৪০ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় এ বৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। তবে দুই মাস পর করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে উদ্যোক্তাদের কপালে। ব্যবসায়ীরা দ্বিতীয় স্ট্রেইন থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য সুরক্ষায় আগাম পদক্ষেপ চান। সরকারের দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোসহ নতুন প্রণোদনা প্যাকেজেরও দাবি জানান তারা।
অর্থনীতিবিদ ড. এম এম আকাশ বলেন, আসলে করোনার প্রভাব নিয়ে এরমধ্যে অনেক গবেষণা হয়েছে। আমরা তারই আলোকে কথা বলেছি। দেশে করোনার দ্বিতীয় স্ট্রেইন কেবল শুরু হয়েছে। এ নিয়ে এখনও কোন স্টাডি হয়নি। এ স্ট্রেইন জনজীবনে কী প্রভাব ফেলবে তা ভালো বলতে পারবেন চিকিৎসকরা। অর্থনীতিতে এর প্রভাব কী হতে পারে তা নিয়ে মন্তব্য করার সময় এখনও আসেনি।
এখানে উল্লেখ্য যে, উল্লেখ্য, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথমরবার করোনা রোগী শনাক্তের পর এ পর্যন্ত এ মহামারীতে দেশে মোট ৮ হাজার ৬০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট আক্রান্ত রোগী সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ৬২ হাজার ৭৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। খবর- আমাদের অর্থনীতি। লেখক- প্রিয়াংকা আচার্য্য।