অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ ছেলেকে আটকে রাখলো এএসআই, মারা গেলেন বাবা:
ছেলে অসুস্থ বাবার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু পুলিশের জন্য সময়মতো পৌঁছাতে না পারায় বাবার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরা জেলায়।
মহামারী করোনায় অসুস্থ বাবার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যাচ্ছিলেন ছেলে। পথে শহরের ইটাগাছা হাটের মোড়ে এএসআই সুভাষ চন্দ্র ছেলেকে দু’ঘণ্টা আটকে রাখায় অক্সিজেনের অভাবে তার বাবার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অক্সিজেনের অভাবে মারা যাওয়া ব্যাক্তির নাম রজব আলী মোড়ল (৬৫)। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের বাসিন্দা। করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনি বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
অক্সিজেন সংকটে মারা যাওয়া ওই বৃদ্ধের ছেলে ওলিউল ইসলাম জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে অসুস্থ ছিলেন আমার বাবা। জরুরী অক্সিজেন প্রয়োজন হওয়ায় সাতক্ষীরা থেকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তিনি। বেলা দশটার দিকে ইটাগাছা হাটের মোড়ে পৌঁছালে তাকে আটক করেন ইটাগাছা ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র।
তিনি আরও জানান, লকডাউনে বাইরে বেরিয়েছে বলে তার কাছে এক হাজার টাকা দাবি করেন এএসআই সুভাষ। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় তাকে দুই ঘণ্টা সেখানে আটকে রাখা হয়। পরে ইটাগাছা এলাকার জনৈক জিয়াউল ইসলামের মধ্যস্থতায় ২০০ টাকা নিয়ে এএসআই সুভাষ তাকে ছেড়ে দেন।
কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। বাড়িতে যেয়ে দেখেন পিতা অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন। আবেগআপ্লুত কণ্ঠে ওলিউল বলেন, যদি সময় মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যেতে পারতাম তাহলে হয়তো বাবাকে বাঁচাতে পারতাম। তিনি এই অমানবিক ঘটনার বিচার দাবি করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির একাধিক পুলিশ সদস্য বলেন, সুভাষের কারণে পুলিশের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।
এ ঘটনার বিষয়ে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র বলেন, একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে দ্রুত গতিতে ওই ব্যক্তি মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তাকে থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চেয়েছিলাম। কাগজ দেখাতে না পারায় তার গাড়িটি আটক করে রেখে তাকে অন্য একটি ইজিবাইকে সিলিন্ডার নিয়ে চলে যেতে বলেছিলাম কিন্তু সে মোটরসাইকেল না নিয়ে যেতে রাজি হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়টি ট্রাফিক ইন্সপেক্টরকে জানালে তিনি মোটরসাইকেলটি ছেড়ে দিতে বলেন। এরমধ্যে সামান্য সময় দেরি হয়েছে। পরে শুনলাম তার বাবা মারা গেছেন।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সজিব খান সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। অভিযুক্ত এএসআই সুভাষ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। আমরা এমন অমানবিক কাজকে কখনোই মেনে নিবনা।