খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা ও নানা তৎপরতা, অপেক্ষা
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবেদন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমণ্ডির বাসায় গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় যান শামীম এস্কান্দার। এরপর থেকেই শুরু হয় নানামুখী তৎপরতা।
শামীম এস্কান্দারের আবেদন করার ২০ ঘণ্টা পর গতকাল বিকাল সাড়ে চারটায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক খোলাসা করেন যে এদিন আর কোনো অগ্রগতি হবে না।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, আইন মন্ত্রণালয় দ্রুতই মতামত দেবে। সন্ধ্যায় তিনি বলেন, রোববারের আগেই মতামত দেয়া হবে। হয়তো সরকারিভাবে রোববারের আগে তা কার্যকর হবে না।
আর ওদিকে বুধবার রাতেই গুঞ্জন উঠে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়া হচ্ছে। তবে কখন নেয়া হবে তা নিয়ে স্পষ্ট কেউ কিছু বলতে পারছেন না। ঐ সূত্র বলছে, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আরো দুইদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেই জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার আবেদনের বিষয়ে সরকার ইতিবাচক।
খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ার বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে বেশ কয়েক দিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। কিছুটা সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবার দলীয় চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলছেন খালেদা জিয়া পোস্ট কোভিড জটিলতায় ভুগছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের করোনা পরবর্তী কিছু জটিলতা রয়েছে। তবে বুধবার দুপুর পর্যন্ত সবকিছুই ঠিক ছিল। কিন্তু বেলা তিনটার দিকে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এ সময় তিনি কিছুটা বুকে ব্যথাও অনুভব করেন।
বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি গত কয়েক দিনে নেই বললেই চলে। এর মধ্যেই তার শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা হওয়ায় শারীরিক পরিস্থিতি খানিকটা অবনতি হয়। সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করেই মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার সুপারিশ করে।
এদিকে করোনামুক্ত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার সকালে তার করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে।
বেগম জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের এক চিকিৎসক বলেন, ম্যাডামের করোনা টেস্টের ফল নেগেটিভ এসেছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। শ্বাসকষ্ট রয়েছে। ডায়াবেটিকসের মাত্রা ওঠানামা করছে।
জানা যায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দেয়া লিখিত আবেদনে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানানো হয়েছে ঐ চিঠিতে।
তবে কোন্ দেশে খালেদা জিয়াকে তার পরিবার নিতে চায়, সে সম্পর্কে চিঠিতে কিছু লেখা নেই বলে জানা গেছে। খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার বিষয়ে বিএনপি’র তিন জন স্থায়ী কমিটির সদস্যের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা জানান, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নেয়া হবে। সেখানে তার ছেলে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা রয়েছেন। সরকার অনুমতি দিলেই পরবর্তী প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে এই মুহূর্তে লন্ডনের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। চিকিৎসার জন্য সেখানে খালেদা জিয়াকে নিতে হলে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। এ ছাড়া, তার ভ্রমণসংক্রান্ত কিছু প্রক্রিয়া এখনো বাকি। ফলে সরকারিভাবে অনুমতি পাওয়ার পরই এ কাজগুলো সম্পন্ন হবে।
লন্ডনে যেতে হলে ওই দেশের সব রকম প্রসিডিউর মেনটেইন করে যেতে হবে। ফলে সরকার অনুমতি দিলেও সেটা কিছুটা সময়সাপেক্ষ হবে বলে জানান তারা।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, সরকার এখনো অনুমতি দেয়নি। সরকারের সিগন্যাল পাওয়ার পর আমাদের যা যা করণীয় তা করতে পারবো। হাইকমিশনে যাওয়া, যে দেশে যাবেন, সে দেশে যোগাযোগ করা ইত্যাদি কার্যক্রম আমরা শুরু করতে পারবো। তবে আগে সরকারের অনুমতি লাগবে। এটার ওপর সব কিছু নির্ভর করছে।